হোমার-সাগরে হিমালয়
-এর নির্বাচিত অংশ
বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু বেচে ফেলার নামই
– চাকরি
মেঘের পা ভারী হলে – মাটিতেই নামে
কফিন যত দামীই হোক, গোরস্থানেই থামে
পড়ছি কেন? চাকরি চাই – রিসার্চ ফিসার্চ বুঝি না
সাগর এলে পায়ের কাছে, নামবো সবাই লবণ চাষে
মুক্তা-টুক্তা খুঁজি না
কিছু রবীন্দ্রনাথ আধখানা নজরুল আর দুটি সুকুমার রায়
টুনি পাড়ার মুদির দোকানে এসেছে। দু’কিলো চাল, আধকিলো ডাল
আর এক হালি ডিম চাই । কিন্তু তার কাছে টাকা নাই। মা বলেছেন,
দোকানদার চাচাকে কিছু একটা বানিয়ে বলে-টলে, বাকিতে কিনতে।
টুনি কী বলবে-টলবে, বুঝতে পারছে না, কটা কবিতা আর গান ছাড়া
সে কিছু জানে না। সেগুলোই চেষ্টা করছে, সুকুমার রায়ের দুটি ছড়া
বলে ফেলেছে– দোকানী ‘আবোল-তাবোল’ কী বুঝেছে কে জানে,
খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসেছে। রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ অনেকখানি
বলেছে, দোকানী এমনভাবে তাকিয়ে ছিল – থেমে যেতে হয়েছে।
এরপর নজরুলের একটি ভক্তিমূলক গান আধখানা গাইতে পেরেছে –
গানের মধ্যেই বদমাশ দোকানী বুঝিয়ে দিয়েছে, আসলে কী চাইছে।¬
টুনি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছে। সে বুঝেছে –
কিছু রবীন্দ্রনাথ আধখানা নজরুল আর দুটি সুকুমার রায়ের দাম
দু’কিলো চাল, আধকিলো ডাল আর এক হালি ডিমের চেয়ে কম ।
কথা দিলাম – পরের জন্মে – তোমার হাতে স্মার্ট ফোন হবো
তোমার সব অবহেলা সেলফি করে – অনলাইনে বেচে দেবো
রাতের কষ্ট পুড়িয়ে পুড়িয়ে জ্বলে সব তারা
সফলতার গল্প হয় না – বিফল মানুষ ছাড়া
আমি ঘর পোড়া ছাই এসো আগুন, তোমায় আলো হতে শিখাই
প্রতিটি মানুষই নদী –
একটি ঢেউয়ের পেছনে ছুটছে, জন্মাবধি –
ঢেউটিকে আমি বলি কবর – তুমি সমাধি
কান্নারও প্রাণ আছে, চোখের জলও কথা কয়
জন্ম আর মৃত্যুর গল্প – কান্না দিয়েই লেখা হয়
অন্যের বউ
তুমি অন্যের বউ হয়ে ভালই হয়েছে। আমার এই ছোট চাকরি,
ছোট ঘর – জানালা তো আরো ছোট। তোমার খুব কষ্ট হতো।
আমার ছোট মানিব্যাগ, বাজার আঁটে না, এখন হাট-বাজার সব বড় বড় –
আমার মানিব্যাগের মাপে বাজার – ঢাকা শহরে আর পাওয়াই যায় না।
আমার মনও খুব ছোট – তোমাকে হারাবো ভাবলেই মনটা একেবারে
ঘুপচি হয়ে উঠতো। তবু মাঝে মাঝে ভাবি – তুমি যদি আসতে,
হয়তো এই ঘুপচিটাই স্বর্গ হয়ে উঠতো। তুমি আসোনি বলে –
আমার যাই হোক না কেন, পৃথিবী একটি স্বর্গ থেকে বঞ্চিত হলো।
আবার ভাবি, স্বর্গে কোন দুঃখ থাকে না, তাই চরিত্র খারাপ হয়ে যায়,
দেবতারা অপ্সরা খুঁজে নেয়। তুমি ওসব সইতে পারতে না, দেখা যেত,
তুমি স্বর্গে বসেই আত্মহত্যা করে ফেলতে। তার চেয়ে এই ভালো –
স্বর্গ একটি আত্মহত্যা থেকে বেঁচে গেলো। তবে একটি বেকারহত্যা
থেকে বাঁচবে কিনা –
ঢাকা শহর জানে না এখনও।
মেঘ চাঁদকে চুমো খাচ্ছে – চাঁদ লুকোতে চায়
জোছনা তখন কই পালাবে, বসলো মেঘের গায়
আমরা ভিসামুক্ত পৃথিবীর কথা ভাবছিলাম – তখনই এলো করোনা
উড়োজাহাজের পাখা কেটে পৃথিবী বললো – সাবধান, হাত ধরোনা
ছুঁয়োনা, ছুঁয়োনা, অশুচিতে ভরা দশদিক
মানুষকে বাঁচাতে মানুষ আজ অমানবিক
আমি করুণ চোখে ভালোবাসার দিকে তাকালাম
ভালোবাসা মুচকি হেসে বললো –
তুমি কি হাতি? হাতে হাতে চাও আহবান?
তুমি মানুষ, মনে মনে হোক তোমার টান
এই সুযোগ – নিজেকে চিনে লও
পৃথিবীর প্রথম মানুষের মতো
বিজনে একা একা কথা কও
মনের কোন আকার নেই – যে পাত্রে ধরো তার মতো
কোন আয়তনও নেই – ছোট-বড় দুটোই হয়, ইচ্ছেমতো
ভেবেছিলে – কোনদিন এতোটা নিচে নামতে পার?
একবার ইচ্ছা করেই দেখো – তুমি হিমালয়ের চেয়ে বড়
আমার কিছু কথা ছিলো, তোমার ছিলো চোখ
শব্দগুলো রইলো চেয়ে – চোখেই সেতু হোক
কয়েকশ কোটি দ্বীপ
যতোবার দুয়ার খুলি, তোমার সাথে দেখা
তবু কেউ কারো নই, দু’জনেই একা
মাঝে মধ্যে নিজের সাথে বেড়াতে যাই
মন নয়, চোখের কথায় হাঁটা দেই
ভীড়ের মধ্যে একলা হয়ে
হারতে হারতে হারিয়ে গিয়ে
জিততে চেয়ে দেখি, আরশিতে টিকটিকি – টিক টিক টিক
একা ঘর, একা বসতি। টিকটিকি বলে, মানুষ সর্বভূক জীব
চেটে-পুটে প্রেম খায়, সব সেতু ভেঙে দেয়
দোপায়া সরীসৃপ
কোথাও মানুষ নেই, পৃথিবীতে শুধুই
ফুলদানি আর ছাইদানি – দুটোই আসলে কফিন
একটি ফুলের মৃত্যুর জন্য, অন্যটি ধূমপানকারীর।
যাই না, বলো – আসি
ঘর থেকে বের হলে দরজা
ফিরে চাই
বলি ইতিকথার পরের কথা
বিদায়, তা’লে এবার যাই
উত্তর আসে না, পথ হাঁটি ছোট পায়
বোকা দরজা, চাবির সাথে কথা কয়
কিছুটা এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ পেছন চেয়ে
নিজের সাথেই হাসি
না, আমাকে কেউ বলে নি –
‘যাই না, বলো - আসি'
চলো না ফুল হয়ে ফুটি, কেননা – আজ বসন্ত
তুমি পড়বে – তাই সপ্তর্ষি এসেছিল কাল রাতে
তোমার কথাই বলেছে তারারা, আমি শুধু তুলেছি খাতাতে
অনলাইনে প্রাপ্তিস্থান: