“… মানুষ গল্পজীবী প্রাণী। মানুষের জীবন একটি গল্প। মানুষ প্রতি মুহূর্তে গল্প বানায় – প্রয়োজনেও বানায়, অপ্রয়োজনেও বানায়। মানুষ গল্পভূক। গল্প শুনতেও ভালোবাসে। মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি যে – মানুষ কোন বিষয়ের শুধু গল্পটুকু মনে রাখে। বাকি সবকিছু ভুলে যায়। আমাদের জীবনের প্রথম দি ন থেকে যা কিছু ঘটেছে, তার মধ্যে যেগুলোকে আমরা কোন না ভাবে গল্প বানিয়ে ফেলতে পেরেছি, সেগুলোই আমাদের মনে আছে।
তাই আমি যা কিছু বলি – গল্পের মতো বলি, যা কিছু লিখি গল্পের মতো লিখি। আমি নিজে একটি গল্পজীবী প্রাণী – এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। …” // — সুজন দেবনাথ
সুজন দেবনাথ একজন কথাসাহিত্যিক এবং কবি। তার পাঠকনন্দিত সুবৃহৎ ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’। সক্রেটিস, প্লেটো, হেরোডটাস, সফোক্লিসদের নিয়ে রচিত এই উপন্যাসে একটি সুখপাঠ্য গল্পের মধ্য দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জন্মের কথা উঠে এসেছে। এথেন্স শহরে থিয়েটার, সাহিত্য, গণতন্ত্র, বিজ্ঞান, ইতিহাসশাস্ত্র, দর্শন, অলিম্পিক গেমস, চিকিৎসাশাস্ত্র, প্লেটোনিক প্রেমসহ আধুনিক জ্ঞানের জন্মকথা নিয়ে এই উপন্যাস। বাংলা ভাষায় এই বিষয়ে এত বৃহৎ কলেবরে আর কোন লেখা হয়নি। গ্রিসের পুরো ক্ল্যাসিকাল সময়কে (খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক) ঘিরে একটি গল্পে এতোগুলো বিষয়ের জন্ম নিয়ে এমন বই বিশ্ব সাহিত্যেই বিরল। সেজন্য ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ বইয়ের গল্পটিকে দেশ-বিদেশের সক্রেটিস বিশেষজ্ঞ এবং গ্রিস বিষয়ক পণ্ডিতগণ ব্যাপকভাবে সমাদর করছেন। এথেন্সের সক্রেটিসের বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘সক্রেটিস কমিউনিটি ইন এথেন্স’ সুজন দেবনাথের ‘Taste of Hemlock’ গল্পটিকে ২০২০ সালের সেরা গল্প হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।
গ্রিসের সাগর পাড়ে ও ভুটানের হিমালয়ের পাদদেশে বসে লেখা তার তার কবিতাগুলোর সংকল ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’। ভিন্ন ধারায় লেখা কবিতাগুলো বাংলাভাষীদের কাছে পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে।
সুজন দেবনাথ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও পরিচিত। সম্প্রতি তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এথেন্স ভ্রমণ নিয়ে একটি মৌলিক গবেষণা করেছেন। কবির এথেন্স ভ্রমণ নিয়ে এটিই প্রথম গবেষণা। কবিগুরুর এথেন্স ভ্রমণ, গ্রিক কবি-সাহিত্যিকদের সাথে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ এবং রবীন্দ্র রচনায় গ্রিক প্রসঙ্গ নিয়ে সুজন দেবনাথের বই ‘হোমারের দেশে রবীন্দ্রনাথ’।
সুজন দেবনাথের রচনা ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে প্রথম ইংরেজী গান নির্মিত হয় ২০১৭ সালে। গ্রিক শিল্পী এবং শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে নির্মিত এই গানে ২১ দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
তিনি লেখালেখি শুরু করেন অব্যয় অনিন্দ্য ছদ্মনামে। এই নামে ২০১৫ সালে তার একটি কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের উঠোন’ এবং একটি গল্পগ্রন্থ ‘কীর্তিনাশা’ প্রকাশিত হয়।
সুজন দেবনাথ বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুটিজুরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তার শিক্ষাজীবন শুরু। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও এঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন (আইবিএ) অনুষদে এমবিএ অধ্যয়নরত অবস্থায় ২৮-তম বিসিএস-এ পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৩য় স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সার্ভিসে যোগদান করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বিষরাবলী ও কূটনীতি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি কূটনীতিক হিসেবে গ্রিসের এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানে ভুটানে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেছেন।
ইমেইলঃ abboy.anindo@gmail.com