Select Page

সুজন দেবনাথের লেখা কিছু প্রিয় পংক্তিঃ

কৃতজ্ঞতা ভীষণ ভারী জিনিষ। মানুষ কৃতজ্ঞতার বোঝা বেশিদিন বইতে পারে না। কেউ উপকার করলে তাঁর সাথে সমান শ্রদ্ধার সম্পর্কটা আর থাকে না। তার সামনে দাঁড়ালে, নিজের প্রতি শ্রদ্ধাটা অনেকখানি কমে যায়। মানুষ নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে বাঁচতে পারে না। তাই মানুষের অবচেতন মন উপকারীর প্রতি বিদ্রোহ করে। যেভাবেই হোক একদিন সব মিটিয়ে দেবো – এমন একটা ভাব মনের ভেতর তৈরি হয়। একদিন তাঁর ক্ষতি করে সেই ঋণ শোধ হয়। এজন্য মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধুগুলোই একদিন শত্রু হয়ে যায়।  
          – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’        

বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু বেচে ফেলার নামই – চাকরি
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’
 

কথা দিলাম – পরের জন্মে – তোমার হাতে স্মার্ট ফোন হবো
তোমার সব অবহেলা সেলফি করে – অনলাইনে বেচে দেবো
  – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

মেঘের পা ভারী হলে – মাটিতেই নামে
কফিন যত দামীই হোক, গোরস্থানেই থামে
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

ছোট প্রেম সংসার গড়ে আর বড় প্রেম সংসার ভাঙে। বড় প্রেম বিরহের জন্য উপযোগী, সংসারের জন্য নয়। সংসার হলো দুটি মানুষের প্রতিদিনের ঝগড়া-ঝাটি, রাগ-ক্রোধ, অভিমান মিশানো একঘেয়ে অম্ল-মধুর জিনিস। তার জন্য দরকার সাধারণ, একঘেয়ে ছোট্ট প্রেম। বড় প্রেমে এগুলো খাপ খায় না। বড় প্রেম হলো হঠাৎ উচ্ছ্বাস, যা দুজনকে ভাসিয়ে নেয়, আশেপাশের মানুষকে নাড়িয়ে দেয়। এই প্রেম দিয়ে ভালো সাহিত্য হয়, কিন্তু ভালো সংসার হয় না। এই প্রেম দুটি জীবনকে পুড়িয়ে দেয়, প্রত্যাশার আগুনে জ্বালিয়ে দেয় সংসার। হেলেন আর প্যারিসের প্রেমে পুড়ে যায় ট্রয় নগর। বড় প্রেম কোন কিছুকে ধরে রাখে না, ধরে রাখে ছোট প্রেম। তাই অনেক আশা নিয়ে শুরু হওয়া বড় বড় প্রেমের সংসার সুখী হয় না, সুখী হয় ছোট প্রেমের সংসার।

ছোট প্রেম নিজে ছোট বলে অন্যায় রাগ-ক্রোধকে জায়গা দিতে পারে, আর জায়গা দিতে দিতে ছোট প্রেমের ব্যক্তিত্ব বড় হয়ে ওঠে, সে সেক্রিফাইস করতে শিখে যায়। আর বড় প্রেম নিজে বড় বলে একটি ছোট্ট অভিমানকেও জায়গা দিতে পারে না, ছাড় না দিতে দিতে বড় প্রেমের ব্যক্তিত্ব ছোট হয়ে যায়, সেক্রিফাইস কি জিনিস সেটাই ভুলে যায়। তাই ছোট প্রেম সংসার গড়ে আর বড় প্রেম সংসার ভাঙে।
            -‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’

আমি ঘর পোড়া ছাই –
এসো আগুন, তোমাকে আলো হতে শিখাই
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা চন্দ্র-স্বভাবী। তারা চাঁদের মতই সবার কাছে ভালো থাকার এক অপরিসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। তারা চাঁদের মতই দূরে থাকে, দূর থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। দূর থেকে মনে হয় এর চেয়ে ভালো মানুষ আর একটিও নেই। সবাই এদের পছন্দ করে।

চন্দ্র-স্বভাবী মানুষেরা খুব ভালো প্রেমিক-প্রেমিকা হয়। কারণ প্রেম জিনিসটা দূর থেকেই সুন্দর। কাছে এনে নেড়ে দেখতে গেলে প্রেম পানসে হয়ে যায়, তেমনি কাছে আসলেই চন্দ্র-স্বভাবী প্রেমিক-প্রেমিকার গোমরও ফাঁস হয়ে যায়। এরা ভালোবাসে শুধু নিজেকে, তোমাকে নয়।

চাঁদ যেমন সূর্যের প্রতি অকৃতজ্ঞ, চান্স পেলেই সূর্যের পথ আটকে দেয় – চন্দ্র-স্বভাবী মানুষেরাও তেমনি বিনা দ্বিধায় উপকারীর ক্ষতি করে। এরা বিস্তর টাকা-পয়সা করে, নিজের আখের গুছায়, ইহলোকে সুখে থাকে এবং পরলোকে স্বর্গবাসী হয়।

আবার পৃথিবীতে অতি অল্প কিছু মানুষ আছে, যারা সূর্য-স্বভাবী। এরা সূর্য-মানব। চাঁদের এতো অকৃতজ্ঞতা সহ্য করেও সূর্য কোনদিন চাঁদকে আলো দেয়া বন্ধ করে না, নিজে হিলিয়ামে পুড়তে পুড়তে আলো দিয়েই যায়। সূর্য-স্বভাবী মানুষগুলোও নিজে সারা জীবন জ্বলতে থাকে। নিজেকে পোড়া আগুনেই অন্যকে আলো দেয়। এদের জন্যই পৃথিবী কক্ষপথে থাকে, এরাই সভ্যতার অক্সিজেন।

সূর্য-মানবরা পৃথিবীর জন্য খুবই উপকারী কিন্তু এরা নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য একটা বিভীষিকা। এরা নিজেরা পোড়ে, সেই সাথে তাদের অতি প্রিয়জনকে অত্যন্ত ভয়ংকরভাবে পোড়ায়। তাদের সাথে সংসার করতে গেলে তুমি প্রতি পদে কাঁদবে। তাই আর যাই কর – সূর্য-মানবদের বিয়ে করো না, তাদের ভালোবাসো, তাদের থেকে আলো নাও, কিন্তু বিয়ে করেছ তো মরেছ। বিয়ে করার জন্য চন্দ্র-স্বভাবী মানুষই ভালো। কারণ সংসার করতে যে ছলনা লাগে, তা সূর্য-মানবদের মধ্যে নেই।
          – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ © সুজন দেবনাথ

পড়ছি কেন? চাকরি চাই – রিসার্চ ফিসার্চ বুঝি না
সাগর এলে পায়ের কাছে, নামবো সবাই লবণ চাষে
মুক্তা-টুক্তা খুঁজি না
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

আমার ছোটবেলার বাবা সব জানতেন
সবকিছুতে সঠিক ছিলেন
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

‘ভালোবাসার বাবা হলেন ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য মানে ক্ষমতা। সেজন্য ভালোবাসার অনেক ক্ষমতা, ভালোবাসার অনেক শক্তি। তুমি ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করতে পারবে। পৃথিবীতে ভালোবাসার মতো এমন শক্তিশালী জিনিস আর নেই। আর ভালোবাসার মা হলেন অভাব। সেজন্য ভালোবাসার চারপাশে সব সময় একটি অভাব। মানুষ প্রেমে পড়লে শুধু চাই আর চাই। আরও বেশি চাই। মনে হয় আমি পেলাম না, সবাই পেল, শুধু আমিই পেলাম না। যখন সে একটু পায়, তখন আরও চায়। যখন আরও বেশি পায়, তখন শুরু হয় হারাই হারাই ভয়। মনে হয় এই বুঝি হারিয়ে যাবে, এই বুঝি চলে যাবে। এই হারানোর ভয় যতদিন থাকে, ততদিনই ভালোবাসা থাকে। যে মুহূর্তে হারানোর ভয় শেষ, সেই মুহূর্তে ভালোবাসাও শেষ। তাই ভালোবাসার সাথে সব সময়ই একটি অভাব জড়িয়ে থাকে, সব সময় একটি না পাওয়ার ব্যাপার থাকে।’
          – [সক্রেটিসের মুখে প্লেটোনিক প্রেমের ব্যাখ্যা] — ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’                          

মনখারাপ আমার সিরিয়াল কিলার –
প্রতিটি নির্ঘুম রাতে খুন করে আমাকে বারবার।
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

সুখ ভেবে ছুঁতে পারো, ব্যথা পেয়ে কাঁদবে অনেকখানি
হিমালয় সাগরকে বলেছে – মানুষ একটি দুঃখজীবী প্রাণী
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

ক্ষমতার একটি মধুর গুণ হচ্ছে তা অতীতকে ভুলিয়ে দেয়। মানুষ যতো দ্রুত ক্ষমতাশালী হতে থাকে, ততো দ্রুত অতীতকে ভুলে যেতে থাকে।সে ভাবতে থাকে আমি এমনই ছিলাম, এমনই আছি, এমনই থাকবো।এই আত্মতুষ্টি তার নিজের জন্য খুবই মধুর।মনে হয় সব কিছুতে আমিই সঠিক, আমি একজন স্বয়ম্ভূ।এক সময় মনে হতে থাকে আমি যা চাই, সেটা হতেই হবে।এই হতেই হবে – এই ভাবনায় সে ধীরে ধীরে চারপাশের মানুষকে অসুখী করে তোলে।তাই ক্ষমতাধরদের চারপাশের মানুষগুলো ভীষণরকম অসুখী।
          – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ © সুজন দেবনাথ

মানুষ গল্পজীবী প্রাণী। মানুষের জীবন একটি গল্প। মানুষ প্রতি মুহূর্তে গল্প বানায় – প্রয়োজনেও বানায়, অপ্রয়োজনেও বানায়। মানুষ গল্পভূক। গল্প শুনতেও ভালোবাসে। মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি যে – মানুষ কোন বিষয়ের শুধু গল্পটুকু মনে রাখে। বাকি সবকিছু ভুলে যায়। আমাদের জীবনের প্রথম দিন থেকে যা কিছু ঘটেছে, তার মধ্যে যেগুলোকে আমরা কোন না ভাবে গল্প বানিয়ে ফেলতে পেরেছি, সেগুলোই আমাদের মনে আছে।

তাই আমি যা কিছু বলি – গল্পের মতো বলি, যা কিছু লিখি গল্পের মতো লিখি। আমি নিজে একটি গল্পজীবী প্রাণী – এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
          – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ এর ভূমিকা © সুজন দেবনাথ

তোমার হাতের মোবাইলখানি
আজ থেকে হোক গোলাপদানি
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

আকাশই ছিল আমার শৈশবের ফেইসবুক
       – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ © সুজন দেবনাথ

মনের কোন আকার নেই – যে পাত্রে ধরো তার মতো
কোন আয়তনও নেই – ছোট-বড় দুটোই হয়, ইচ্ছেমতো
ভেবেছিলে – কোনদিন এতোটা নিচে নামতে পার?
একবার ইচ্ছা করেই দেখো – তুমি হিমালয়ের চেয়ে বড়
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

ক্ষমতার প্রতিশব্দ একটাই – ভয়
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

পৃথিবীর গর্ভ হতে উঠে এসেছে। কালো পাথরের ঢিপ
সান্তোরিনীর সাগর চুপ। বলছে কথা অগ্নিগিরির দ্বীপ।
          – ২০১৮ সালের অক্টোবরে গ্রিসের সান্তোরিনী দ্বীপ দেখে © সুজন দেবনাথ

ঠোঁট থেকে সাবধান –
চুমো দিয়ে দিয়েই ঠোঁট সিগারেটকে মেরে ফেলে
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

সক্রেটিসের দেহ চলেছে সমাধির পথে। আঁধারের ঘোমটা মাথায় দিয়ে জেনথিপিও হাঁটছেন সমাধির দিকে। তিনি কাঁদছেন না। শুধু তার পায়ে পায়ে কাঁদছে কতগুলো শুকনো জলপাই পাতা। সন্ধ্যার আঁধার ছাপিয়ে একটি পাখি নিদারুণ করুণ সুরে ডাকছে। পাখির কণ্ঠে দুনিয়ার সমস্ত বিরহ ঝরে ঝরে পড়ছে। এজিয়ান সাগরের উষ্ণ বাতাস ভিজে উঠেছে। মহাকালের গহ্বর থেকে ভেসে আসছে অচেনা একটা মরণ-মরণ গন্ধ।

একটি অবিনশ্বর মৃত্যুর জ্যোতি নিয়ে অদ্ভুত আঁধার নামছে পৃথিবীতে। সেই আঁধারের গা বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় চুঁইয়ে পড়ছে মৃত্যু। মহাবিশ্বের মহত্ত্বম কান্নায় ভিজে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত আলো। মরণ সাগরের উপর দিয়ে অনাগতকালের পথ-সন্ধানী মানুষের জন্য নিমন্ত্রণ নিয়ে আসছে একটি পাখি-
পাখিটির ঠোঁটে এক পেয়ালা হেমলক।
          – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ                                                         

আমার কিছু কথা ছিলো, তোমার ছিলো চোখ
শব্দগুলো রইলো চেয়ে – চোখেই সেতু হোক
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                             

মহাবিশ্বের সবচেয়ে অকৃতজ্ঞ বস্তু হচ্ছে চাঁদ। সূর্যের থেকে যতটুকু সম্ভব আলো নিয়ে, ক্রুর চাঁদটা সুযোগ পেলেই সূর্যের আলো আটকে দিয়ে সৃষ্টি করে সূর্যগ্রহণ। চন্দ্রভক্ত প্রাণী মানুষও চাঁদের মতই অকৃতজ্ঞ।
           – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ © সুজন দেবনাথ                                                                                     

চলো না ফুল হয়ে ফুটি, কেননা – আজ বসন্ত
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’                                       

মায়ের কোলে মাথা রাখতে আমার খুব ইচ্ছা হয় – কিন্তু
তার মুখের প্রতিটি বলিরেখা আমাকে আসামী করে দেয় –
মায়ের পেটের প্রতিটি দাগ আমাকে ফাঁসির রায় শুনায়।
             – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                          

ভালোবাসার জন্ম হয়েছে সৌন্দর্যের দেবীর জন্মদিনে। সেজন্য ভালোবাসা সব সময় সুন্দরের খোঁজ করে। যেখানেই সুন্দর কিছু আছে, সেখানেই ভালোবাসা। ভালোবাসা হলো ঐশ্বর্য আর অভাবের সন্তান। এই দুটো হলো পুরোপুরি বিপরীত। ঐশ্বর্য্য সুন্দর আর অভাব অসুন্দর। ভালোবাসার যেমন সুন্দর করার ক্ষমতা আছে, তেমনি কিছু অসুন্দর করার ক্ষমতাও আছে। ভালোবাসা যেমন মঙ্গল করে, তেমনি হিংসারও জন্ম দেয়। তাই ভালোবাসা শান্তি আনে, তেমনি ভালোবাসা থেকে যুদ্ধও হয়।
            – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ [সক্রেটিসের মুখে প্লেটোনিক প্রেমের ব্যাখ্যা]

ভরার জন্য একটা জায়গাই খালি আছে – এই পৃথিবীতে
তোমার জন্য কবর, আমার জন্য চিতা – সাড়ে তিন হাতে
             – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                   

মানবতার রঙও দেয়াল খোঁজে
কোনখানে বেশি আলো বোঝে
সব আর্তনাদ সবাইকে ছোঁয় না
অনেক কষ্টই কয়লায় থেমে যায়
হীরা আর হয় না
            – ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ

ছোট্ট গাছে দুইটি পাতা – একটি হলুদ ফুল
ভর দুপুরে তোমার আমার প্রথম করা ভুল
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ           

কথা ছিলো – পৃথিবীতে সব মিলে একটা সুখ হবে
তবু সুখ জিরো-সাম  – এতো টুকরা  –  খণ্ড
আমি সুখী হলে, কষ্টে ওঠো জ্বলে– যত সব ভণ্ড
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                          

ঝিকমিক করলেও নিয়নবাতি দুঃখ-রাতের তারা হয় না।
           – ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ                                                              

সেই প্রথম দিন থেকে ছাইদানিটি ভেবেই যাচ্ছে –
আজই সিগারেট ফ্যাক্টরির নামে মামলা করবে।
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                                    

সক্রেটিস বলল, জনাব, আমার মা একজন ধাত্রী, কারণ তিনি অন্য মায়েদের সন্তান জন্ম দিতে সাহায্য করেন; আমিও একজন ধাত্রী, কারণ আমি অন্যদের মাঝে জ্ঞানের জন্ম দিতে কাজ করি। দুটোই জন্ম দেওয়া, শুধু তরিকা আলাদা। আমি হলাম জ্ঞানের ধাত্রী।
           – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’                                                                                                                                                                                    

সব সুখই পাখি, কিন্তু সব পাখি সুখ নয়
সব মানুষই লোক, সব লোক মানুষ নয়
              – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’                                                             

ক্ষমতা আসলে একটি সুখবিনাশী শক্তি। ক্ষমতাশালী মানুষ নিজেও সুখী নয়, সে কাছের মানুষদের সুখী করতেও পারে না।
          – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ © সুজন দেবনাথ                                                                                              

নদী আমার মা –
অন্য কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না।
কথাটা আমাকে বলেছে বাংলাদেশ –
বিশ্বাস না করে পারছি না।
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                                   

চুল আর ভুল সংখ্যায় ব্যাস্তানুপাতিক
          – ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ                                                    

কান্নারও প্রাণ আছে, চোখের জলও কথা কয়
জন্ম আর মৃত্যুর গল্প – কান্না দিয়েই লেখা হয়
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                                

শ্মশান ঘাটে সবার উচ্চতা সমান
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

পৃথিবীর সব মা সন্তানকে একই ভাষায় বকা দেয়। একই সুরে ঘ্যান ঘ্যান করে।
বিধাতা মায়েদের ঘ্যান ঘ্যান করার এক অসীম ক্ষমতা দিয়েছেন।
          – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ

মেঘ চাঁদকে চুমো খাচ্ছে – চাঁদ লুকোতে চায়
জোছনা তখন কই পালাবে, বসলো মেঘের গায়
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                                    

সব কথা স্বরতন্ত্রে শব্দ করে না,
সব পাখি সব সময় চিনে না নীড়
কিছু কথা লেখা থাকে ভ্রু-পল্লবে
বুঝে নিতে হয় তারে সরিয়ে ভিড়
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’                                      

একলা তুমি? কেউ পাশে নেই? আজো তোমার কান্না থামেনি?
কেবল তাকিও না, দেখো –
শুধু তোমায় নিয়ে ওড়বো বলে – আজো আমি ওড়া শিখি নি
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                

প্রতিদিন বয়স বাড়ে,
নতুন নতুন কতো কিছু দেখি
পুরান সূর্য ওঠে নতুন করে,
প্রতিদিন আমি নতুন কিছু শিখি
           – গ্রিক কবি সলোনের কবিতার অনুপ্রেরণায়, ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ এ ব্যবহৃত     

আপনি হাসছেন? হাসুন  –
আজ চাকরির বিজ্ঞাপন কাটছি –
আপনিও লিস্টে আছেন
শীঘ্রই আপনার সব অপমান কাটবো।
         – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’

চাকরির খবরটা এলেই – ফেইসবুকে এক ধারালো
স্ট্যাটাসে কেটে ফেলবো সব অবহেলা-করুণা-বিদ্রুপ।
আত্মীয়-বন্ধুর তালিকা থেকে কাটবো অনেক নাম।
বেকার-ছেলের-জননী লিস্ট থেকে মায়ের নাম কাটবো।
পারলে মায়ের জন্য হজে যাবার টিকিটও কাটবো।
বোনের পরীক্ষার ফি’র রিসিপ্ট নিজ হাতে কাটবো।
      – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ     

অবশ্য কিছু জিনিস এখন আর কাটতে হয় না –
বাবার কাছে টাকা চেয়ে টেলিফোনটা অনেকক্ষণ
বাজতে বাজতে এমনিতেই কেটে যায়। বাবাকে
আর লাইন কাটতে হয় না। তিনি চলে গেছেন –
আমার অপেক্ষার ছোট্ট আকাশটা কেটে অনেক
বড়ো আকাশে। চাকরি পেলে – আকাশের সবচেয়ে
উজ্জ্বল তারাটির নাম দেবো – ‘বাবা’।
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ     

ভালোবাসা মাপতে দুঃখ স্কেল হয়ে যায়
     – ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ

প্রতিটি মানুষই নদী –
একটি ঢেউয়ের পেছনে ছুটছে, জন্মাবধি –
ঢেউটিকে আমি বলি কবর – তুমি সমাধি
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                                  

মানুষ প্রথমে দেহের সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসে। সবাই এভাবেই শুরু করে। এরপর আর একটু জ্ঞান বাড়লে, আর শরীরের সৌন্দর্য না, মনের সৌন্দর্য খোঁজে। সেটা আর একটু উচ্চ পর্যায়ের ভালোবাসা। মানুষ যখন আরও একটু বুঝতে শিখে, তখন সে জ্ঞানকে ভালোবাসতে শুরু করে। এক সময় সে হয়ে যায় জ্ঞানের প্রেমিক। আর জ্ঞানের প্রতি প্রেমই হলো সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ভালোবাসা। জ্ঞানের প্রেমিক হলেন দার্শনিক বা ফিলোসফার (Philosopher)। ফিলিন (philein) মানে ভালোবাসা আর সফি (Sophie) মানে জ্ঞান। ফিলোসফার হলেন যিনি জ্ঞানকে ভালোবাসেন। জ্ঞানপ্রেমিক। তাই ভালোবাসার সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা হয়, মানুষ দার্শনিক হয়ে যায়।
           – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ [সক্রেটিসের মুখে প্লেটোনিক প্রেমের ব্যাখ্যা]                 

দেয়ালে বাবার ছবি ঝুলছে – হঠাৎ তাকাই
ছবিতে আমার ছেলের বাবা, আমার বাবা নাই
        – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

যে কোন অবস্থায় ভালোবাসার কথা বলতে, শুনতে আমার ভাল লাগে। পড়তেও ভাল লাগে। পৃথিবীর সকল কালজয়ী সাহিত্যই নাকি আসলে প্রেমের সাহিত্য।
           – ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ

 

আপনি
একটি নদী নিয়ে
পৃথিবীর সাথে হাঁটছিলেন
পৃথিবী ঘুরছে – আপনি মোটা হচ্ছেন
আপনি মোটা হচ্ছেন – আপনার নদীটি সরু হচ্ছে
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

কলম আর শ্যামের বাঁশির কলহে কোকিল এল রেফারি হয়ে-পৃথিবীর যাবতীয় চমক ঠোঁটে নিয়ে নাম নিল মিডিয়া। সেই থেকে মিডিয়াই পৃথিবীর একমাত্র চুম্বক-মাউথ অর্গানে ঢেউ তুলে নামজারি করছে উত্তম-অধম।
           – ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ

মুঠোফোনের কার্নিশে – ধার করা এসএমএসে
মিথ্যামিথ্যিই বলুক সে – ভালো থেকো – নতুন বর্ষে
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                   

পাশে থাকো যদি –
পাড়ি থেকে আগুনভরা দুঃখ রঙের নদী
অন্ত থেকে আদি –
নিরবধি
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’                      

মানুষ দুঃখজীবী প্রাণী। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে একটা দুঃখ-কোঠা আছে। সেই কোঠায় সব সময়ই কিছু না কিছু দুঃখ থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষেরও একটা দুঃখ-কোঠা আছে। সেখানে কারণে অকারণে বাঁশি বাজে। বিরহের বাঁশি।
           – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ

ঘুম নিয়ে পালিয়েছে যে – তাকে বলছি ডেকে
একদিন ঠিক হিসেব নেবো, সবটুকু একে একে
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                 

সমুদ্রের এবারের ভাসানে যদি ভাস্কো-দা-গামারা এমুখো হয়,
তাঁদের জাহাজ কেড়ে বলব –- এবার ঋণ শোধের ভেলায় ওঠ্।
          – ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ

আলোর অক্ষমতার যন্ত্রণাকে নাম দিয়েছ ছায়া
আলো কিছু বলেনি –
পৃথিবীর জ্বর সীমা ছাড়ালে, সাগর ছাড়বে না
পানি ক্ষমা শিখেনি
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                            

তোমরা আলো চাওনা, চাও আগুন – আগুনে টাকা পোড়ে – পৃথিবী পড়ে জ্বরে
তোমাদের লোভ আকাশে ওড়ে, ওজোনলেয়ার ফুটো করে, পৃথিবীর জ্বর বাড়ে
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                             

আড্ডার জন্য উচ্চস্তরের কথা ক্ষতিকর। আড্ডায় দরকার তুচ্ছ কথা, টুকরা আলাপ।
            – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ                                   

গল্পকার, হেমলক-মুক্ত পৃথিবীর গল্প বলি
মানবতার অসুখ সারাতে পদ্য লিখে চলি
                            – © সুজন দেবনাথ                  

কাল রাতে তুমি – চাঁদকে যে কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলে –
আমি তোমার হয়ে সেই কথাটি বলছি – তুমি শুনতে পাচ্ছ কি?
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                         

ক্ষমতার একটি তিক্ত গুণ হচ্ছে ক্ষমতা ভীষণরকম নিঃসঙ্গ।মানুষ যতো ক্ষমতাধর হয়, নিজের কাছে ততোই নিঃসঙ্গ হতে থাকে। তখন তার চারপাশে অনেক মানূষ, কিন্তু নিজের মানুষ একজনও নেই।তাই বাইরে যতোই সুখী দেখাক না কেন, ক্ষমতাশালী মানুষেরা নিজের কাছে বিশ্রীরকম অসুখী।
          – ‘ইউরেকা মোমেন্ট’ © সুজন দেবনাথ

ফুলদানি আর ছাইদানি – দুটোই আসলে কফিন
একটি ফুলের মৃত্যুর জন্য, অন্যটি ধূমপানকারীর।
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ      

জগতের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে প্রেম। নির্বাক চোখে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকা প্রেমিক যুগলই আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। আমার মনে হয় – আমি যদি সারা জীবন মায়ের কোলে শিশু অথবা প্রেমিকার চোখে প্রেমিক হয়েই থাকতে পারতাম – আর কিছু চাইতাম না।
          – ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ                                                                        

সূর্য সারাক্ষণ হিলিয়ামে পুড়ছে
কবি বলছে আলো – বিজ্ঞানী বলছে শক্তি
সূর্যের পুড়ে যাবার কষ্ট কেউ বলছে না
সুদিন আনার কথা দিয়ে ওরা মানুষ মারছে –
সবাই দেখছে খুন – খুনিরা বলছে মুক্তি
শুধু মানুষের মৃত্যু কেউ দেখছে না
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

মানুষমাত্রই নদী, তফাৎ –
সে দুই কূলই ভাঙে, জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি
            -‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

জন্ম থেকে জলের সাথে খেলা করে মাছ – কোনদিন ভিজে নাই
থুথু নিজের গায়ে দাও – আমাকে ভেজানোর সাধ্য তোমার নাই
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                    

পুরুনো শহরে নতুন আলো, স্মৃতির দুয়ারে ভ্রম
আড়াই হাজার বছর ধরে ডাকছে আমায় রোম
           – ২০১৯ সালে রোম শহর দেখে © সুজন দেবনাথ                        

কান্নার কোন রঙ নেই
পুরুষ না নারী কাঁদছে – অশ্রুতে তা লেখা নেই
যে চোখ থেকেই ঝরুক না কেন – অশ্রুর কোন জেন্ডার নেই
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                            

এখানে মানুষ বড় টলটলে –
সতের কোটি জোয়ার-ভাটা – উথাল-পাথাল খেলে।
এখানে প্রেম বড়ই অভিমানী – ভেতরে জল, বাহিরে পানি
এখানে মানুষ মাত্রই ঢেউ –
হিন্দু-মুসলিম দুকূল ভাঙে –
পূবে-পশ্চিমে বাংলা ভাঙে –
দেখতে পায় না কেউ
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                                                           

এ রকম আগুন রঙের ভাষা আর কারো নেই। এমন রক্ততিলকপরা বর্ণমালা ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও খুঁজে পাবে না।
          – ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ

দুঃখ আমার মুখমণ্ডল, সুখ হলো তার আয়না
আমায় রেখে আয়না নিবে, হয়না তা হয়না
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ           

জেলখানার ছোট্ট ঘরে মাত্র রাত নেমেছে। এক কোনে জ্বলছে জলপাই তেলের প্রদীপ। নিভু নিভু আলো। সেই ডুবন্ত আলোয় একজোড়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাদের জীবনের শেষ হিসাব নিকাশ করছেন। দুজনেই জানেন এ রাতই তাদের একসাথে কাটানো শেষ রাত। তারা নিঃশব্দে নিভু নিভু প্রদীপের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাইরে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে।

তারা জানেন, দিন কেটে আবার রাত হবে। সেই রাতেও এমন করেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকবে। শুধু দুজনে পাশাপাশি বসে আর সেই ডাক শুনবেন না। বৃদ্ধ আগামীকাল পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। আগামীকালই সক্রেটিসকে হেমলক খেতে হবে।
         – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ © সুজন দেবনাথ

আমরা ভিসামুক্ত পৃথিবীর কথা ভাবছিলাম – তখনই এলো করোনা
উড়োজাহাজের পাখা কেটে পৃথিবী বললো – সাবধান, হাত ধরোনা
ছুঁয়োনা, ছুঁয়োনা, অশুচিতে ভরা দশদিক
মানুষকে বাঁচাতে মানুষ আজ অমানবিক
আমি করুণ চোখে ভালোবাসার দিকে তাকালাম
ভালোবাসা মুচকি হেসে বললো –
তুমি কি হাতি? হাতে হাতে চাও আহবান?
তুমি মানুষ, মনে মনে হোক তোমার টান
এই সুযোগ – নিজেকে চিনে লও
পৃথিবীর প্রথম মানুষের মতো
বিজনে একা একা কথা কও
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

খাঁচা – তোকে দিলাম মেয়ে হবার ভয় – মেয়ে-জন্ম বড় ভালোবাসি
তুই প্লিজ আমার ভয় নিয়ে থাক, আমি কারাতে ক্লাসটা শেষ করে আসি
            – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

সারারাত জ্বলে জ্বলে জোনাকীরা শারদ প্রভাতে শিউলি হয়ে যায়।
         — ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ                           

তুমি ফুলটি ছিড়ে নিলে – মৌমাছি চেয়ে চেয়ে দেখে
কারো কারো বিলাসিতায়, কেউ কেউ খালি পেটে থাকে
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ                 

ভাগ্যিস শূন্য আবিষ্কার হয়েছিল –
গণিতবিদরা আমার হৃদয় নিয়ে কাড়াকাড়ি করে না
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ          

খেলনা রে তুই দুই হৃদয়ের, একলা খেলছি আমি
একলা খেলতে ভাল্লাগেনা – শুন্য হৃদয়ভূমি।
খোকারে তুই ডাক দে জোরে – বাবা উড়াল দিবে
তোর দুই গালেতে যুগল চুমো – আসবে সে দিন কবে?
          – ‘মন খারাপের উঠোন’ © সুজন দেবনাথ                       

তুমি সাত বার দিলে শূন্য, অষ্টম বারে লিখি এক – এককোটি বানাই
হারতে শিখি নাই – আমি একটি স্বপ্নের এপিটাফে নতুন স্বপ্ন টানাই
          – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ            

ইদানিং সক্রেটিসের একটা রোগ হয়েছে – প্রশ্নরোগ। সে সব কিছুতে প্রশ্ন করে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন। বিনা প্রশ্নে সে কিচ্ছু মেনে নেয় না। মুরুব্বিরা কিছু বললে অন্য সব ছেলে একবাক্যে মেনে নেয়, কিন্তু সক্রেটিস মানে না। পাল্টা প্রশ্ন করতে থাকে। তার প্রশ্নের যন্ত্রণায় মুরুব্বিরা অস্থির হয়ে যায়।

সক্রেটিসের এই প্রশ্নরোগ ভীষণ ছোঁয়াচে। কোন এক রহস্যময় কারণে তার সাথে যে মিশে, সেও প্রশ্নরোগে আক্রান্ত হয়। সেও সব কিছুতে প্রশ্ন করতে শুরু করে। সক্রেটিসের কাছে একবার আসলে তরুণরা অন্ধের মতো তাকে অনুকরণ করতে থাকে। ইলেকট্রিসিটির ছোঁয়ায় ধাতু যেমন ইলেকট্রিফাইড হয়, তেমনি সক্রেটিসের কাছে আসলেই তরুণরা হয়ে যায় সক্রেট্রিফাইড।
          – ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ এর ভূমিকা © সুজন দেবনাথ              

একটি অতিথি পাখির কাছে হেরে গেছে রাষ্ট্র – মুছে গেছে সীমানা
পাখিটি দেশে দেশে ঘুরছে – ভিসাহীন – পালকেই লিখছে ঠিকানা
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ

তুমি পড়বে – তাই সপ্তর্ষী এসেছিল কাল রাতে
তোমার কথাই বলেছে তারারা, আমি শুধু তুলেছি খাতাতে
           – ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ © সুজন দেবনাথ