হঠাৎ এক সন্ধ্যায় আপনি একটু অসুস্থ হলে, পরদিন সকালে দেখবেন– বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ আপনার জন্য ডাক্তার হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারে আপনার কাছে এসে ডাক্তারি করছে, লাখো মানুষ আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে। আপনি এখন বেকার– আপনার জন্য ১৭ কোটি ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে। পথে, ঘাটে, বাজারে, লাইব্রেরিতে, ফেইসবুক থেকে টয়লেটের দেয়ালে- সবখানে আপনার জন্য উঁকি দিচ্ছে মাল্টিকালার পরামর্শ। সবাই পরামর্শ দিবে। কিচ্ছু করার নেই– শুনতেই হবে। ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিতে এগুলো হচ্ছে আপনার ডেটা। এই ডেটার সবকিছু আপনার মাথায় থাকবে না। শুধু কিছু পছন্দের ডেটা আপনার মাথায় প্রসেস হয়ে রয়ে যাবে। মানে কিছু পরামর্শ আপনি মনে মনে গ্রহণ করবেন। সেগুলো হলো আপনার ইনফরমেশন। ইনফরমেশন ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না।
But information is a silent time killer. যত ইনফরমেশান আসবে – ততো সময় নষ্ট করবে। ফেইসবুক, গ্রুপ, পেইজ, ওয়েবসাইট, গাইড, কোচিং, পরামর্শদাতা সব মিলে একটা সময় আসবে, যখন ইনফরমেশন আপনার প্রিপারেশানে সাহায্য করবে না, বরং সময় নষ্ট করতে থাকবে। এটাই Information Overload. সম্ভবত এই মুহূর্তে আপনি এই স্টেজে আছেন। আপনি Information Overload এর যন্ত্রণায় অতিষ্ট। আপনি বুঝতে পারছেন না, কিন্তু আপনার ব্রেইন এটা ফেইস করছে। আপনি ইনফরমেশনে ডুবে আছেন।
এই Information Overload হতে আপনাকে এক্ষুণি মুক্ত হতে হবে। এজন্য ইনফরমেশনকে পরিণত করতে হবে নলেজে। সেই নলেজ কাজে লাগালেই প্রিপারেশান হবে। এতো এতো ইনফরমেশনকে প্রসেস করে প্রিলির জন্য একটা প্যাটার্ন বানিয়ে ফেলুন– প্রিলির জন্য কি পড়ব, কি ভাবে পড়ব, কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেব আর কোনটাকে কম দেব – সেই প্যাটার্ন। এটা করতেই পারলেই আপনার ইনফরমেশন হয়ে যাবে নলেজ। Data -> Information -> Knowledge
সেই নলেজ ব্যবহার করেই প্রিলি প্রিপারেশান নিন। ইনফরমেশানে ডুবে থাকবেন না। যেদিন ইনফরমেশনকে নলেজে পরিণত করতে পারবেন – সেদিন থেকে আপনি নিজেই নিজের ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট। সেদিন থেকে প্রিলির জন্য আর কারো কথা আপনার শোনার দরকার নেই।
ঐদিনই ক্যারিয়ার সম্পর্কিত ডেটা রিসিভ সম্পুর্ণ বন্ধ করে দিবেন – আর কারো কথা শুনবেন না। মহামূল্যবান সময় অন্যকে দেয়ার দরকার নেই। একটু সেলফিস হোন। তো ইনফরমেশনকে নলেজে পরিণত করার জন্য আপনার হাতে দুটো অস্ত্রঃ সিলেবাস আর আগের বছরের প্রশ্ন। বাকি যে যা বলুক (আমিসহা) – সেই কথায় পাত্তা দেবার আগে একটু ভাববেন – পাত্তা না দিলেও চলবে। আগের তিন বছরের প্রশ্ন এনালাইসিস করুন। মানে প্রতিটা বিষয়ে কোন চ্যাপ্টার থেকে কি এসেছে ভালো করে দেখুন। এরপর প্রিলির সিলেবাস দেখুন। নিজে ভালো করে এনালাইসিস করুন। অন্য কেউই আপনাকে পূর্ণাংগভাবে বলবে না। সে যেটা পড়েছে – সেটাই বেশি বেশি বলতে চেষ্টা করবে। সেটা তার জন্য সঠিক, আপনার জন্য নাও হতে পারে।
তাই এই এনালাইসিসটা নিজে করুন। বের করুন – যা পড়তে হবে তার মধ্যে আপনি কি জানেন আর কি জানেন না। দেখুন – আপনার শক্তিশালী জায়গা কোনগুলো, আর দুর্বলতা কোথায় বেশি। সাবজেক্ট ধরে ধরে দুর্বলতাগুলো একটা খাতায় লিখে ফেলুন। চ্যাপ্টারের নামসহও লিখতে পারেন। যেখানে দুর্বলতা – সেখানেই সময় দিতে হবে। দুর্বলতা দূর করতেই হবে। সেজন্য বই পড়ে, গাইড পড়ে, ইন্টারনেট থেকে, লাগলে কারো সাহায্য নিয়ে – যেভাবে আপনার সম্ভব, সেটাই করতে হবে। একটা টার্গেটেড সময়ের মধ্যে এই দুর্বলতা কাটাতে হবে। এটাই প্রিলি প্রিপারেশান। আপনি এই স্টেজে চলে আসার পর, যে যা বলুক, আপনি মনে মনে বলবেন – Sorry, no more information – I am already overloaded.
© সুজন দেবনাথ