Select Page

আমি আসলে প্রেমের একজন অন্ধ সমর্থক।

তাই ছোটবেলা থেকেই বন্ধু-বান্ধবদের প্রেমের ব্যাপারে আমি একজন সফল পরামর্শদাতা। পরামর্শের থিউরি ছিল একটাই – ফার্স্ট ইন, ফার্স্ট আউট। মানে আগে গেলে আগে পাবেন।

আবার আমার পরামর্শ যাতে বেশি রিস্কি না হয়ে যায় সেজন্য সাথে যোগ করে দিতাম – তবে মনে রাখতে হবে, প্রেমের রাস্তাটা কিন্তু একটা সাপলুডুর কোর্টের মত। মই বেয়ে দুদিনেই সানাই বেজে উঠতে পারে। আবার একেবারে শেষ মুহূর্তেও শুন্যের ঘরে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

যাই হোক, আমার এইসব পরামর্শের সাফল্যের হার ছিল প্রায় শতভাগ। তাঁদের সাফল্যের জন্য মাঝে মাঝে আমাকে প্রেমের করণ কারকও হতে হত। চিঠি, এসএমএস এসব সাপ্লাই দিয়ে করণ কারক হিসেবেও দেখলাম আমি ব্যাপক সফল।

এরপর হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, শুধু প্রেম না, ঘটকালির ক্ষেত্রেও আমার দক্ষতা অসামান্য। যেসব আত্মীয়দের অনেক দিন বিয়ে হচ্ছিল না, আমি একটু চেষ্টা করতেই তাঁদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাইলে তো আমি মনে হয় একজন ভালো ঘটকও। ঘটকালি তো সমাজের একটা মহান পেশা। প্রেমের করণ কারক হবার একটা সমস্যা হল – প্রেমে বৈধ-অবৈধ বিষয়টা নিয়ে একটা দোলাচল থাকে। এই সমস্যা ঘটকালিতে নেই। ভালোই উপভোগ করছিলাম ঘটকালি।

তো আমি তখনো আইবিএতে পড়ি। একদিন এক ফেইসবুক বন্ধু নক করলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিয়ে করবেন, পাত্রী খুঁজছেন। তাঁর কথাবার্তা ভালোই লাগল। কিন্তু কথার টপিক একটাই – বিয়ে। বিয়ের নামে একেবারে বাকবাকুম বাকবাকুম করছিলেন। যেন বিয়ের জন্যেই জীবন, বিয়ে না হলে মরণ।

বললেন, ‘ভাই, বয়স তো হয়ে যাচ্ছে। এদেশে তো হিন্দুর প্রতিষ্ঠিত ছেলে বা মেয়ে খুবই অল্প। দেখেন না, যদি সন্ধানে কেউ থাকে।’
আহারে বেচারা – তাঁর তুমুল যৌবন বুঝি হুদাই যায়!

যাই হোক, তাঁর যুক্তি কিছুটাতো সঠিক। পাত্রী পাওয়া আসলেই সহজ নয়। আর আমিও তখন মনে মনে একজন তুমুল ঘটক। কিছুতো করাই লাগে।

তাঁর প্রোফাইলের সাথে ম্যাচ করে এমন মেয়ে খুঁজতে শুরু করলাম। প্রথমেই পাত্রী হিসেবে মাথায় এল আমার আইবিএর এক ক্লাসমেটের কথা। তবে আমি সেই মেয়ের সম্বন্ধে খুব বেশি জানি না। তবে যতটুকু দেখি, ভাল বলেই মনে হয়।

ওই শিক্ষককে বললাম তাঁর কথা – ‘আমি বিশেষ কিছু জানি না। তবে মেয়েটি এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিনই আসে, আপনি চাইলে নিজেই খোঁজ নিতে পারেন। আর আমাকে বললে আমিও সরাসরিই কথা বলতে পারি।’

হঠাৎ শিক্ষক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওই মেয়ের এফেয়ার নেই তো?’

একটু ধাক্কা খেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথচ শুরুর এপ্রোচটাই এমন! বেশ বিপদে পড়লাম। এর উত্তর তো আমার জানা নেই।
বললাম, ‘এটা জানতে যতটুকু ঘনিষ্ঠতা দরকার, ওই পাত্রীর সাথে আমার সেটা নেই। আর এই খোঁজটা আমি নিতেও পারব না।’ আর বেশি কথা বা বাড়িয়ে রেখে দিলাম।

সপ্তাহ খানেক পরে ওই পাত্রী মানে আমার আইবিএর ক্লাসমেট ফোন দিল। বেশ রাগি রাগি গলা। বলতে শুরু করল, ‘আচ্ছা, সুজন দা, আপনি আমাকে প্রেম করতে দেখেছেন?’

আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বললাম, মানে?

‘বলেন, দেখেছেন কিনা?’ এইবার একটু ঝাড়ির মুড তাঁর গলায়।

‘না তো’। আমার মিনমিনে উত্তর।

‘তাইলে আপনি লোকজনের কাছে কেন বলে বেড়াচ্ছেন যে, আমার এফেয়ার আছে?’

আমি তো হতভম্ব। অনেকক্ষণ কথা বলে বুঝতে পারলাম, সেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মেয়েটিকে বেশ ক’দিন ফোন করেছেন। বলেছেন, আমি নাকি বলেছি, ওই মেয়ের এফেয়ার আছে। এটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বেশ ঝগড়া হয়েছে। বুঝলাম, ঝগড়ার পর সেই শিক্ষক চেয়েছেন – এখন তাঁরা নিজেরা মিটমাট করে ফেলুক। মানে আম আর দুধ মিশে যাক, আর আমি আঁটি হয়ে ডাস্টবিনে যাই। তাই আমার নামে যা ইচ্ছা বলেছে। সে মিথ্যে কথা বলে মেয়েটিকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছে। ধরা খেয়ে সকল দোষ আমার উপর চাপিয়েছে।

যাই হোক, আমি মেয়েটিকে শুধু সত্য কথাটা বলে রেখে দিলাম। তাঁর মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করিনি। সেটা আমি পারিও না। আমি নিজের প্রেমিকারই মান ভাঙাতে চেষ্টা করিনা। আর অন্যের পাত্রীর মান ভাঙ্গাব? আমি তো কৃষ্ণ নই, রাধাদের মানভঞ্জন আমার কাজ নয়।
আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!

বুঝলাম – শুধু ডিগ্রী পেলে, ভাল চাকরি করলেই ভাল মানুষ হয় না। তাঁর মত মানুষের সাথে কথা বলার আর প্রয়োজন নেই। যাই হোক, আমার ঘটকালির এখানেই ইতি।
তবুও ঘটকালি একটি মহৎ কাজ।

ঘটকালি // সুজন দেবনাথ