Select Page

আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। এর আগের কয়েক শতক ধরে ইউরোপ জন্ম দিয়ে যাচ্ছে শত শত বিস্ময়কর নাবিক। তাঁরা সাগরে ভেসে ভেসে খুঁজে বেড়ায় কোথায় আছে এক টুকরো মাটি। অকূল সাগরের নীলজলে চালায় কম্বিং অপারেশান।

এভাবে দুঃসাহসী এই নাবিকরা আবিষ্কার করে চলে একের পর এক দেশ। আর কিছুদিন পরে সেটিকে দখল করে বানিয়ে ফেলে নিজেদের উপনিবেশ।এভাবে প্রিন্স হেনরি, কলম্বাস, ভাস্কো-দ্যা-গামারা প্রায় সারা পৃথিবীর মাটি নিজেদের করে ফেলল।

আঠারো শতকের মাঝামাঝি সারা পৃথিবীর মাটি ইউরোপীয়ানদের কাছে চেনা হয়ে গেছে। শুধু পৃথিবীর একেবারে দক্ষিণ দিক ছাড়া।

আমরা ছোট বেলায় ঠাকুরমার কাছে রূপকথা শুনতাম। রাজপুত্র চলছে দস্যুর হাতে বন্দিনী রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে। পথে এক সাধু তাঁকে উপদেশ দেয় – তুমি পুর্ব, পশ্চিম, উত্তর সবদিকে যাবে – কিন্তু দক্ষিণ দিকে যাবে না। সেখানে মহাবিপদ। সেখান থেকে কেউ বেঁচে ফিরে না। এরকম রূপকথা মনে হয় ইউরোপেও প্রচলিত ছিল। তাই আঠারো শতকের শেষ দিকে সারা পৃথিবী আবিষ্কার হয়ে গেছে। শুধু দক্ষিণ দিকে কেউ যেতে পারেনি। যারাই চেষ্টা করেছে, মারা গেছে অকালে।

সেই সময়ে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের এক তরূণ নাবিক পণ করলেন। তিনি যাবেন ঐ দক্ষিণ দিকে। ইউরোপ থেকে পূবের দিকে প্রশান্ত মহাসাগর ধরে এগিয়ে যাবেন তিনি। বের করবেন পৃথিবীর সর্বশেষ দক্ষিণবিন্দু। এই তরুণই হলেন ব্রিটিশ ইম্পেরিয়াল হিরো ক্যাপ্টেন কুক। কুক হলেন ব্রিটিশ নেভিগেশানের আধুনিকতম নক্ষত্র।

প্রশান্ত সাগরের সীমাহীন জলে ভাসতে ভাসতে একদিন তিনি ঠিকই পেয়ে গেলেন একটা বিশাল ভূখন্ড। ব্রিটিশদের জন্য আবিষ্কার করলেন একটা নতুন মহাদেশ। প্রথম তিনি যেখানে এসে নামলেন, সেটা নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ড ধরে আগাতে আগাতে একটা সৈকতে এসে তাঁর দৃষ্টি একেবারে আটকে গেল। এত চমৎকার সৈকত তিনি আগে কখনও দেখেননি। এর সবকিছু আলাদা। এর জল কেমন যেন ঘোর লাগানো নীল। সেই নীলজলে স্নান করছে একটা বিশাল ভুখন্ড। যেন এক দুঃখিনী রাজকন্যা নীল রং ছড়িয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে গেছে অজানায়। কুক সেখানে থেমে গেলেন। তাঁর জাহাজ এনডেভার আর আগাল না। সাথী নাবিকরা নেমে গেল সেই নতুন সৈকতে। সময়টা ১৭৭০। তৈরি হল ব্রিটিশদের নতুন উপনিবেশ নিউ-হল্যান্ড। এই নিউ-হল্যান্ডেরই এখনকার নাম অস্ট্রেলিয়া।

ক্যাপ্টেন কুক যে সৈকত দেখে মুগ্ধ হয়ে থেমে গিয়েছিলেন, সেটিই সিডনি। ঠিক যেখানটায় কুকের জাহাজ এনডেভার এসে ভীড়েছিল, সেটি সিডনির বোটানি বে।

© সুজন দেবনাথ