Select Page

‘রোবট কবিতা লিখতে পারে কিনা’-
কয়েক বছর আগে এ নিয়ে পৃথিবীর কয়েকটি শহরে কয়েকটি পরীক্ষা হয়েছিল। পরীক্ষার জন্য এ যাবৎ উদ্ভাবিত সবচেয়ে আধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অনেক দিন ধরে কম্পিউটারকে কবিতা লিখতে শেখানো হলো। তারপর দেখা গেলো, রোবট সত্যিই কবিতা লিখে ফেলেছে। একেবারে ঝকঝকে কবিতা, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছে। তার মানে মানুষের আর কবিতা লিখার দরকার নেই। যে কাজ মেশিন করতে পারে, সে কাজ আর মানুষের করার দরকার কী! দেখা গেলো রোবটের কবিতার ছন্দ, মাত্রা এসবে কোন ভুল নেই। গণিতের হিসাবে একেবারে মাপে মাপে বসিয়ে দিয়েছে সব কিছু। কবিদের মাথায় হাত! কেউ বলতে পারবে না যে ওগুলো কবিতা হয়নি।

তখন রোবটের লেখা পঞ্চাশটি আর মানুষের লেখা পঞ্চাশটি কবিতা একসাথে মিশিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে দেয়া হলো। উদ্দেশ্য – কোনগুলো মানুষের লেখা আর কোনগুলো কম্পিউটারের লেখা, সেটা আলাদা করা যায় কিনা, তা পরীক্ষা করা। দেখা গেলো, শিক্ষার্থীরা মোটামুটি ধরে ফেলতে পেরেছে। তারা মানুষের লেখা কবিতা আলাদা করতে পেরেছে। তার মানে রোবট মানুষের মতো কবিতা লিখতে পারে না। রোবটের কবিতায় একটা মেশিন মেশিন ভাব রয়েই যায়। কবিরা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা কি অতো সহজে ছাড়েন! তারা আরো কিছুদিন ধরে রোবটকে আচ্ছারকম করে শিখালেন, আবার পরীক্ষা হলো। এবার দেখা গেলো, কোনগুলো রোবটের লেখা আর কোনগুলো মানুষের, সেটা আলাদা করা যাচ্ছে না। রোবট সত্যিই একেবারে মানুষের মত কবিতা লিখতে পারছে। কবিদের দিন শেষ! কবিদের আর কেউ ডাকবে না!

তখন কিছু কবি দেখলেন, রোবটের নতুন কবিতাগুলো একেবারে বিখ্যাত কবিদের কবিতার মতো। কিছু কবিতা শেক্সপিয়রের কবিতার মতো, কিছু জন কিটসের মতো। তখন বিজ্ঞানীরা গোমর ফাঁস করলেন, কম্পিউটার শুধু অনুকরণ করতে পারে। তাকে যদি ‘শেক্সপিয়রের সনেট’ শিখানো হয়, সে মোটামুটি ওরকম সনেট লিখে ফেলে, ‘এমিলি ডিকসন’-এর স্টাইল শেখানো হলে, হুবহু তার মতো কবিতা বের হবে রোবটের পেট থেকে। মাত্রা, ছন্দ, চরণ এসব নিয়ে গঠনে রোবট কোন ভুল করে না। কিন্তু নতুন কোন আইডিয়া রোবট আনতে পারে না।

তার মানে, নতুন কথা বলতে কবিকেই দরকার। রোবট কবিতা লিখতে পারবে, কিন্তু নতুন কোন আইডিয়া দিতে পারবে না। নতুন ভাবনা, নতুন গড়ন এসব রোবট পারবে না। সুজন দেবনাথের ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’ বইটির মতো কবিতা রোবটকে শেখানো হলে, সে নিঃসন্দেহে এইরকম কবিতা লিখতে পারবে, কিন্তু পরের বইতে সুজন দেবনাথ নতুন কোন আইডিয়া আনছে, কোন ধারা নিয়ে আসছে, সেটি রোবট কোনদিনই নিজে থেকে পারবে না। সেজন্য পৃথিবীতে কবিদের প্রয়োজন কোনদিন ফুরাবে না।

কবিরা মানুষের মনের কথা বলেন। আপনার মনের কথা কবি মানুষকে জানান। আপনি ভাবতেই পারেন, আপনার ভালোবাসার কথাটি তো রবীন্দ্রনাথই বলে গেছেন, খুবই সত্য, তবু নতুন সময়ে নতুন করে বলতে আপনার ইচ্ছে হতেই পারে। কারণ আপনি নতুন দিনের নতুন মানুষ। আপনার মনের কথা নতুন করে বলতে এখনও কম্পিউটার পারে না, সেটি বলতে কবিকেই লাগে।

© সুজন দেবনাথ // লেখাটি ‘হোমার-সাগরে হিমালয়’-বইয়ের ভূমিকা থেকে নেয়া

…………………