Select Page

আমার আত্মার সুহৃদ কিন্তু বর্তমানে প্রায় যোগাযোগহীন কয়েক বন্ধুর কথা ৫/৬ বাক্যে বলব। ভার্সিটিতে পড়ার সময় সিলেটে আমরা এক মেসে ৫ বছর ছিলাম। আজ একাকী বিকেলে সবার কথা মনে পড়ল –

রাজীব (Md. Mostafizur Rahman) :
আমার চার বছরের রুমমেট। আমরা এক বিছানায় ঘুমাতাম আর একই বোতলে পানি খেতাম। শুধু ক্রিকেট মাঠে ‘হাউ ইস দ্যাট’ ছাড়া ওরে কোনদিন মিথ্যে বলতে শুনিনি। ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সিলেটের ২য় বিভাগে ক্রিকেটও খেলেছে। আমার মনে হয় – এখনও ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন ছাড়ে নাই। কানাডার সাইমন ফ্রেজার ভার্সিটিতে পড়া শেষ করে আপাতত কানাডায়ই আছে। তবে আমি নিশ্চিত – ও একদিন স্থায়ীভাবে দেশেই ফিরে আসবে। Bangladesh deserves such a patriotic soul. ঝগড়া করার পরে, আমি নিশ্চিত থাকতাম, ওই আমার সাথে আগে কথা বলবে। তাই ওর ভালো মানুষীর সুযোগ নিয়ে আমি ভাব নিয়া বসে থাকতাম।

তপু (Jyotirmay Sarker Tapu) :
আমি যখন বিসিএস শব্দটার মানেই জানতাম না – তখন থেকেই ও বলত, একদিন অবশ্যই এএসপি হবো। আমাদের মধ্যে একমাত্র ওরই ‘এইম ইন লাইফ’ রচনাটা শিখে লাভ হয়েছে। এখন ও পুলিশের এডিশনালএসপি। পরিসংখ্যানে পড়ত। পরিসংখ্যনে যেমন মনের মত করে যতটুকু ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়া যায় – তেমনি তপুও আড্ডায় বসলে যতদূর ইচ্ছা বলতে থাকত। গল্পের গরুকে গাছে না উঠিয়ে ওর আড্ডা শেষ হত না। এখনো আমি লেখার সময় মাঝে মাঝে মনে করি – তপু হলে এই প্লটে কিভাবে গল্পটা লম্বা করতো। ও ভালো ফুটবল খেলত। ডেভিড বেকহামের মত শট নেয়ার জন্য ঘুমের মধ্যেও বাম পা ছোড়াছুড়ি করত সুদর্শন এই ছেলেটি।

জুয়েল (Jewel Kumer Saha) :
ধর্মভীরু এই ভদ্র ছেলেটা ফার্স্ট ইয়ার এসেই বলল – ধুর! প্রেম করে বাজে ছেলেরা – আমি কোনদিনই প্রেম করবো না। ফলাফল হিসেবে – আমাদের মধ্যে ওই সবার আগে প্রেম করলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ঘাসে প্রেমের স্বাক্ষর রেখে, পাশ করার কিছু দিনের মধেই বিয়েও করে ফেললো। আর দুদিন পরেই ছেলেকে বলবে – বাবা, প্রেম করে বাজে ছেলেরা, তুমি কিন্তু কোনদিনই প্রেম করো না। সারাদিন বুদ্ধিজীবিদের বকাঝকা করতো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সে নিজেই এখন বুদ্ধিজীবি হবার পথে। বর্তমানে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমি নিশ্চিত – ওর মত ধীর স্থির ছেলেকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে শিক্ষার্থীরা ভাগ্যবান। ফিজিক্সে পড়ত আর সুযোগ পেলেই বলত – ‘Physics is the mother of science’. আমরা বলতাম – hum, that’s true but Computer is the father of science.

মোহন (Mahan Paul):
সে নিজেকে ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজের মুকুটহীন সম্রাট মনে করত। অথচ সব সময়ই হেরে যেত। হারার পর প্রতিবারই বলতো, ‘তোরে আগে যতগুলা সেট দিছি, প্রতিটার জন্য এক টাকাও করে দিলেও আমি এতোদিনে কোটিপতি হয়ে যেতাম’। কোটপতি হবার জন্য আবার খেলত – যথারীতি আবার হারতো। ক্রিকেটে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার জন্য শ্রীলংকার সাপোর্টার হবার যথাসাধ্য অভিনয় করতো। শ্রীলংকা টিমে আর একজন মুরালীধরণ আবার কবে আসবে, সেই আশায় শ্রীলঙ্কার ২য় বিভাগের ক্রিকেটের ওয়েবসাইটে ঘোরাঘুরি করতো। ক্রিকেট জ্ঞানে সে মোটামুটি ভারতের হর্ষ বোগলের কাছাকাছি – নিজে কোনদিন মাঠে নামে নাই, কিন্তু সব পরিসংখ্যন ঝাড়া মুখস্ত। তাস খেলায় যতই হারুক না কেন – পেশাগত জীবনে ভীষণ সফল। বর্তমানে স্যামসাংয়ে উচ্চপদে আছে।

আরিফ (@Arifur Rahman ) :
ওর মত দায়িত্বগুণসম্পন্ন ছেলে আমি জীবনে আর একজনও দেখিনি। বউকে সুখী করার সমস্ত গুণাবলী আমাদের মধ্যে একমাত্র ওরই ছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো – আমাদের দেশে গুণ বেশি থাকলে সেটা কাজে লাগতে দেরী হয়। তাই আরিফ এখনো এলিজিবল ব্যাচেলর। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এঞ্জিনিয়ার। এখনো কোন প্রোগ্রাম আয়োজনের কথা মনে হলে, কোন কিছুর দায়িত্ব নিতে হলে – আরিফই আমার প্রথম পছন্দ।

একলা বিকেলের স্মৃতিতে ওরা আমার আশ্রয়।
© সুজন দেবনাথ