বাংলা ভাষায় নারীদের সম্বোধন করার জন্য যেসব শব্দ আছে, তার বেশির ভাগই মারাত্মক রকমের নেগেটিভ। মহিলা শব্দটির মানেই হলো যিনি মহলে থাকেন – বাইরে বের হন না, একেবারে অসূর্যম্পশ্যা।
সক্রেটিসের যুগে এথেন্সের নারীরা ছিলো একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মহিলা – তারা শুধু মহলেই থাকতেন। একেবারেই অসূর্যম্পশ্যা, শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়া তারা বাইরে আসতে পারতো না। এথেন্সের সেই বন্দী নারীদের ভেতর ব্যতিক্রম ছিলেন সক্রেটিসের মা। তিনি ছিলেন ধাত্রী। অন্য নারীদের সন্তান জন্ম দিতে সাহায্য করতেন তিনি। আর এই কাজে প্রায়ই দিনে-রাতে যখনই প্রয়োজন হতো বাইরে যেতেন তিনি। তার স্বামী বাধা দিতেন না। এতে করে ছোটবেলা থেকেই নারীদের সম্পর্কে সক্রেটিসের একটা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।
এথেন্সের অন্য পুরুষরা যখন নারীদের অবজ্ঞা করাটাকেই পৌরুষের পরিচয় মনে করতেন, তখন সক্রেটিস তার শিষ্যদেরকে আসপাসিয়া নামে এক নারীর বক্তৃতা শুনার পরামর্শ দিতেন। তার মতে তখন এথেন্সের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ ছিলেন আসপাশিয়া। মায়ের কাজকে সক্রেটিস সারা জীবন উঁচু নজরে দেখতেন।
একদিন এক বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, তুমি সারা দিন এতো জ্ঞান জ্ঞান করো কেন?
সক্রেটিস বললো, কী করবো, আমার মা শিখাইছে।
– মা শিখাইছে মানে? তোমার মা তো একজন ধাত্রী মাত্র।
– হুম, আমার মা একজন ধাত্রী। তার ছেলে আমিও ধাত্রী। আমি আর আমার মা একই কাজ করি।
– কি বললে? এথেন্সে যেখানে অন্য নারীদের মুখ দেখা নিষেধ, সেখানে তুমি পুরুষ হয়ে একজন ধাত্রী? ছিঃ ছিঃ ছিঃ …
– হুম জনাব, আমার মা অন্যদের সন্তান জন্ম দিতে কাজ করে, আমি অন্যদের মাঝে জ্ঞানের জন্ম দিতে কাজ করি। দুটোই জন্ম দেয়া, শুধু তরিকা আলাদা।
© সুজন দেবনাথ
………