মানুষ দুঃখজীবী প্রাণী। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী কিশোর-কিশোরীরা এটা প্রথম টের পায় প্রেমে পড়লে। হঠাৎ করে শৈশবের সুখের অর্থ একটু একটু করে পাল্টে যায়। একটা অচেনা চাওয়া তৈরি হয়। অজান্তেই জীবন শুরু করে অন্য জীবনের সাথে লেনদেন। জীবনে জীবন ঘষতে ঘষতে এক সময় জ্বলে ওঠে আগুন। এই আগুনের নামই ভালোবাসা।
আগুনের ধর্মই পোড়ানো। অতৃপ্ত অগ্নিকে তৃপ্ত করতে মহাভারতের অর্জুন সম্পুর্ণ খাণ্ডব বন আগুনের মুখে তুলে দিয়েছিলেন। তবু আগুন তৃপ্ত হয়নি, পুড়িয়েই চলছে। তাই ভালোবাসার আগুনও পোড়ায়। সুখের ফাঁদ পেতে অসুখের রাস্তা তৈরি করে। দিনে দিনে ভালোবাসার ছাই-কয়লা জমিয়ে জমিয়ে মানুষ হয়ে যায় দুঃখজীবী প্রাণী।
সুনীল গাঙ্গুলী বলতেন, ‘ভালবাসার সাথে একটা অসুখ লেগে থাকে’। রবীন্দ্রনাথ গাইতেন, ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না, শুধু সুখ চলে যায়।’ একটা সুইডিশ প্রবাদ পড়েছিলাম, ‘Love is the Fire of Life – it either consumes or purifies.’
ভাবছেন এসব আজাইরা বিষয়ে আপনি নিজেই তো এক্সপার্ট। কথা সত্য। আপনি প্রেমের ক্ষেত্রে অন্তত আমার চেয়ে এক্সপার্ট, এই ব্লাংক চেক আমি চোখ বুজেই দিয়ে দিতে পারি। আমি ভালবাসার এক্সপার্ট বা লাভ গুরু নই। তবে আমাকে কিন্তু সত্যি সত্যি একবার লাভ গুরু বানিয়ে দিয়েছিল। একেবারে অফিসিয়ালি।
সরকারি চাকুরির ট্রেনিং করতে আমাদের নিয়ে গেল সিলেটে – বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং ইন্সটিউটে। সেখানে সবার নামে একটা করে খাম রাখা – খামের উপর প্রত্যেকের নাম, পদবী লিখা। তো আমার খাম হাতে নিলাম। নামের নিচে পদবীর জায়গায় লিখা – ‘সহকারী সচিব, মিনিস্ট্রি অফ এফেয়ার্স’। চমকে উঠলাম। বারেব্বা! সরকার প্রেম, এফেয়ার্স এসব মেনেজ করার জন্য নতুন মন্ত্রণালয় – ‘মিনিস্ট্রি অফ এফেয়ার্স’ খুলেছে নাকি! আর কিচ্ছু না জানিয়েই তাতে আমাকে নিয়োগ দিয়ে দিয়েছে! সাধু সাধু, সরকার বাহাদুর এত্ত রসিক! এমন চাকরি পাবার জন্য চন্ডীদাসের মত বড়শী নিয়ে একপায়ে দাঁড়িয়ে আছি কতকাল। শুধু ঘাট পাই নি ছিপ ফেলার জন্য। তো রসিক সরকার বাহাদূর যদি সেই ঘাটের ব্যবস্থা করে আমাকে এফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েই দেন – কী আর করা! আমি তো আবার না বলতে পারি না।
আসলে সেখানে ‘মিনিস্ট্রি অফ ফরেন এফেয়ার্স’ লিখতে টাইপিস্ট ‘মিনিস্ট্রি অফ এফেয়ার্স’ লিখে ফেলেছিল। আফসুস – এমন কিছু প্রিয় জিনিস শুধু ভুল করেই আমার কাছে আসে। সত্যি সত্যি আসে না।