ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় সিটি। এখানে এসে বুঝতে পারছি আদিম মানুষেরা কিভাবে কমিউনিকেট করত। এরা ইংরেজী কিছুই বোঝে না। বাংলার সাথে ইশারা করে (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে) বললে মাঝে মাঝে কাজ হয়। সেটা কি বাংলার গুণ নাকি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের জাদু জানি না। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বা বডি লাঙ্গুয়েজকে ভরসা করেই চলছি। তবে এই বডি ল্যাঙ্গুয়েজেরও নাকি অনেক বিপদ। এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক একবার ইরানে গিয়ে Its ok বুঝাতে গিয়ে Thumbs-up sign দেখায়। তাঁর তো সাদা মনে কাদা ছিলো না। কিন্তু বুড়ো আঙুল উপরে তুলতেই ইরানীরা শুরু করে ব্যাপক কিল, ঘুষি। মধ্যপ্রাচ্যে Thumbs-up মানে ভয়াবহ রকম ডার্টি কিছুর ইঙ্গিত।
ভিয়েতনামে সাইন লাঙ্গুয়েজে চলতে গিয়ে আমার কপালেও কি আছে কি জানি। সেই ভয়ে ভিয়েতনাম মিথোলজির পর্বতের দেবতা তান ভিয়েন (Tan Vien) কে স্মরণ করছি। না হলে এখনকার ভিয়েতনামীদের মত শান্তির বুদ্ধকেই প্রণাম করি। তাতেও না হলে ভিয়েতনামের সত্যিকার দেবতা হো চি মিং-কেই লাল সালাম জানাই।
দুই সপ্তাহ আগে ভিয়েতনাম নিয়ে বেশ মজা করেছিলাম। বলেছিলাম ভিয়েতনামীরা ইংরেজী জানে না। তাই বলে কিন্তু তাঁরা অশিক্ষিত নয়। তাঁদের শতকরা পঁচানব্বই জনই লিখতে পড়তে জানে। শুধু তাঁরা ইংরেজী বিমুখ। এই বিমুখতার সাথে মিশে আছে তাঁদের রক্তাক্ত ইতিহাস, বঞ্চনামাখা অতীত। ইংরেজী ভাষী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভিয়েতনামে মানবতাকে পদদলিত করেছে, রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে একটা পুরো প্রজন্মকে আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংস করে দিয়েছে, তাতে ইংরেজী শিখতে না চাওয়া তাঁদের জাতিগত অহংকার। তাঁদের এই মানসিকতাকে লাল-সালাম।
.
তবে ইংরেজী থেকে দূরে মানে তো আন্তর্জাতিকতা থেকে আড়ালে চলে যাওয়া। তাই সময়ের প্রয়োজনে ভিয়েতনামীরাও এখন ইংরেজী শিখছে। বাচ্চাদেরকে ইংরেজী শিখতে উৎসাহিত করছে। আর সেজন্য চলছে প্রচারণা। এরকমই একটি প্রচারণা চোখে পড়ল ৪ আগস্ট। হ্যানয় শহরের ‘হোয়ান কিয়েম’ লেকের ধারে। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের টি-শার্টে লিখা – I Love English, Nothing Can Stop Me. হ্যাঁ, কোন কিছুই তোমাদের আটকাতে পারবে না। জয় হবেই ভিয়েতনামী এই নতুন প্রজন্মের। তাঁরা জয়ী জাতি। তাঁদের বাবা-মায়েরা যুদ্ধ করে পরাজিত করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে। তাঁরাও নিশ্চয়ই পূরণ করবে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন।
© সুজন দেবনাথ