রামায়নে আছে, রাবণ সীতাকে হরণ করে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে গেলে সীতার খোঁজে হনুমান সাগর পাড় হয়ে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে পৌঁছল। সম্পূর্ণ নতুন দেশ শ্রীলঙ্কা, দেখে তো হনুমানের আনন্দ একেবারে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মত উছলে উছলে পড়ছিল। আনন্দে এগাছের ডাল থেকে ওই পাহাড়ের চূড়ায়, সেখান থেকে আরেক প্রাসাদের মাথায় লম্ফ-ঝম্ফ করতে করতে হনুমান ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল। খাবারের খোঁজে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, কাছেই একটা গাছে বেশ হলুদাভ একটা ফল। ওই ফল খাদ্য না অখাদ্য তা ভাবার মত সময় বা অবস্থা তাঁর ছিল না। এক লাফে কয়েকট ফল মুখে নিয়ে ফেলল। ওমা, এরকম সুস্বাদু ফলতো সে ভারতবর্ষে কোনদিন খায়নি। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, “অমৃতফল!” এই ‘অমৃত’ শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে আমৃত; আর আমৃত থেকে লোকের মুখে মুখে বাংলায় ‘আম’ হয়ে গেল। যাই হোক, হনুমান সেখানে মনের আনন্দে অমৃতফল খাচ্ছে আর ভাবছে, সীতাকে লংকায় না পেলে আর হয়তো কোনদিন লংকায় আসাই হবে না, এরকম অমৃতফলও আর খাওয়া হবে না। তা কী করে হয়! এই ফলকে ভারতবর্ষে পাঠাতেই হবে। এই ভেবে হনুমান একটা করে ফল খেতে লাগল আর আমের আঁটিটাকে সাগরের অপর পাড়ে ভারতবর্ষের দিকে ছুঁড়ে দিতে লাগল। ওই আঁটিগুলো থেকেই ভারতবর্ষে আমগাছ জন্ম নিল। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, এভাবে ‘আম’ নামক ফলটি ভারতবর্ষে অভিষিক্ত হল।
কিন্তু হনুমান তখনও জানত না যে, আরো দু-একটা সাগর দূরে ইউরোপ নামের একটা মহাদেশ আছে, তারাও একদিন আম খুব পছন্দ করবে। জানলে তখনই হনুমান কয়েকটা আমের আঁটি ইউরোপের দিকে ছুঁড়ে মারত। আর ‘অমৃত’ থেকে যেভাবে ‘আম’ শব্দটা এসেছে, সেভাবেই আমের একটা ইংরেজী নামও জুটে যেত। আফসোস, হনুমানের এই অজ্ঞতার জন্য ইংরেজী ভাষায় Mango শব্দটি সৃষ্টি হতে কয়েক সহস্রাব্দ কেটে গেছে।
এবার আসা যাক, ‘আম’ কিভাবে ইরেজীতে ‘Mango’ হল সে ইতিহাসে। এই ইতিহাসটা আমার ছোটবেলার দার্শনিক গুরু মনাপাগলা আমাকে বলেছিল। দার্শনিক মনাপাগলার বলা সকল কথাই আমি ধ্রুবসত্য বলে মেনে নিয়েছি, পাঠকরা চাইলে বিশ্বাস করবেন, না চাইলে গুজব বলে উড়িয়ে দেবেন।
হনুমানের ভুলের কারণে ইংরেজদের ভারতবর্ষ শাসনপূর্ব সময়ে আমের কোন ইংরেজী শব্দ ছিল না। কলকাতা নগরী পত্তন করে ইংরেজরা যখন বাংলায় বসবাস শুরু করলো, নেটিভদের সব কিছুতেই ছিল তাদের বিতৃষ্ণা। তার মধ্যেও যে দু-একটা নেটিভ জিনিস তাদের অভিভূত করে ফেলল তার মধ্যে “আম” নামক ফলটি ছিল অন্যতম। বিশেষতঃ ইংরেজ শিশুরা এই চমৎকার ফলটির একেবারেই স্বাদমুগ্ধ হয়ে পড়ল। তাই ঝাঁকা মাথায় আমওয়ালাকে আম… আম…. বলতে বলতে ইংরেজ এলা্কায় দেখামাত্র ইংরেজ শিশুরা চিৎকার করে উঠত । আমের কোন ইংরেজি শব্দ তো তারা জানত না, তাই মাকে ডেকে ঝাঁকা মাথায় আমওয়ালাকে দেখিয়ে বলতো, Mummy, Man Go, Man Go ! আস্তে আস্তে বাচ্চাদের এই Man Go শব্দ দুটা বড়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ল। আমওয়ালাকে দেখলেই সাহেবরা মেমদেরকে ডেকে বলা শুরু করল, ‘কইগো, শুনছো, Man Go, হবে নাকি দু-একটা?’ মেমরা জিবের জলটুকু লুকিয়ে বলত, আমার নিজের তো দরকার নেই, কিন্তু বাচ্চারা যে ঘুম থেকে উঠেই বলবে, Man Go! ইংরেজ পাড়ায় ঝাঁকা মাথায় আমওয়ালা মানেই তখন রব উঠে যেত – Man Go, Man Go. ধীরে ধীরে Man এবং Go শব্দদুটো একত্রিত হয়ে আমের ইংরেজি শব্দ প্রচলন হয়ে গেলো – তৈরী হলো ম্যাঙ্গো (Mango).