রোগ মানেই দেবতার অভিশাপ। অসুস্থ হয়েছ? হবেই তো, তোমার উপর যে দেবতারা রুষ্ট হয়েছে। এই ছিলো অসুস্থতা বিষয়ে ইউরোপের দর্শন। সেই সময়, মানে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই সব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন এক গ্রীক। তিনি বললেন, দেবতা-টেবতা কিছু না।
রোগ হলো শরীরের একটা নিজস্ব সমস্যা। শরীর যখন স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারে না, তখন যে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাই হলো রোগ। এই গ্রীক মানুষটি শুধু মুখে বলেই বসে থাকলেন না। তিনি প্রাকটিক্যালি মাঠে নেমে গেলেন মানুষের রোগ সারাতে। দেবতাদের অভিশাপ আর আশীর্বাদের উপর ভরসা করে বসে না থেকে শুরু করলেন সার্জারি। গাছপালা থেকে তৈরি করতে শুরু করলেন ঔষধ। এই মানুষটিই পশ্চিমের চিকিৎসাবিদ্যার জনক (Father of the Western Medicine). তাঁর নাম হিপোক্রিটাস।
হিপোক্রিটাস জন্মেছিলেন গ্রীসের কস দ্বীপে। সক্রেটিসের প্রায় একই সময়ে। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার সূত্রপাত তার হাতেই। কস দ্বীপেই তিনি তৈরি করেন ইউরোপের প্রথম মেডিক্যাল স্কুল। গ্রীসের সুস্থতার দেবতা এসক্লিপিয়াসের নামে সেই স্কুলের নাম এসক্লিপিয়ন। ইউরোপের ডাক্তারদের কাছে এই এসক্লিপিয়ন হলো সবচেয়ে বড় তীর্থ, আর হিপোক্রাটিস হলেন ডাক্তারদের আধুনিকতম দেবতা।
আজো চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তাররা যে শপথ নেন, তাও এই হিপোক্রিটাস সাহেবেরই লিখা। হিপোক্রাটিক শপথ (Hippocratic Oath) থেকেই আধুনিক চিকিৎসকদের জন্য আদর্শ নিয়মনীতি তৈরি হয়। মেডিক্যাল এথিকসেরও জনক হিপোক্রাটিস। ডাক্তাররা তাঁদের গ্রাজুয়েশানে Hippocratic Oath উচ্চারণ করেই শুরু করেন চিকিৎসক হিসেবে নতুন জীবন।
ছোটবেলায় ভাবতাম একদিন ডাক্তার হবো। হিপোক্রাটিসের মত একটা কিছুই হব। সেই ছোটবেলার একটা কিছু তো আর হওয়া হলো না। তাই বড়োবেলায় কস দ্বীপে গিয়ে খুঁজতে চাইলাম সেই ছোটবেলার হিপোক্রাটিসকে। একবার ছুঁয়ে দেখতে চাইলাম আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার তীর্থভূমিটিকে।
……………………
চিকিৎসাবিদ্যার তীর্থভূমে // © সুজন দেবনাথ