মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ঠিক পাশেই একটি পার্ক।
নাম ফিটজরয় গার্ডেন। এই পার্কে আছে ক্যাপ্টেন কুকের বাড়ি। নাম কুকস কটেজ। ভুবন বিখ্যাত নাবিক, অভিযাত্রিক, আবিষ্কারক ক্যাপ্টেন জেমস কুক। ব্রিটিশ ইম্পেরিয়াল হিরো তিনি। না, কুক সাহেবের জন্ম মেলবোর্নে হয়নি। তাঁর জন্ম ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে। ব্রিটিশ এই নাবিকই ইউরোপীয়ানদের জন্য প্রথম আবিষ্কার করেন অস্ট্রেলিয়া। সেটা ১৭৭০ সালের কথা। এর আগে ইউরোপীয়দের কাছে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের এই বিশাল মহাদেশ ছিলো অজানা। ব্রিটিশদের হিরোকে সম্মান জানাতে ব্রিটিশরাই তাঁর বাড়িটি জাহাজে করতে নিয়ে আসে মেলবোর্নে। হুবহু একই রকম ভাবে বসিয়ে দিয়েছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পাশের ফিটজরয় গার্ডেনে। কুকের ব্যবহার করা জিনিসপত্র দিয়ে মোটামুটি ছোট্ট একটা জাদুঘর বানিয়ে রেখেছে।
ইউরোপিয়ানরা অস্ট্রেলিয়া এলে কুকের এই বাড়িটি অবশ্যই দেখে আসে। আমরাও দেখলাম – পৃথিবীর অন্যতম দুঃসাহসী আর ইউরোপিয়ানদের চোখে সবচেয়ে সফল অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন কুকের কটেজ। মোটামুটি ভিড় আছে। টিকেট পেতে অনেকক্ষণ লাগলো। ভালোই লাগলো – আঠারো শতকের ব্রিটিশ নাবিকের বাড়ি। কটেজের সামনে কুকস সাহেবের ব্রোঞ্জের মুর্তি। মূর্তিটির দিকে তাকালে একটি বিশেষত্বই চোখে পড়ে। ক্যাপ্টেন কুকের কোমর থেকে নিন্মাংগ মনে হয় নগ্ন। আসলে নগ্ন না, ‘টাইটস’ পড়া। কিন্তু এক দেখায় যে কেউ বলবে নগ্ন। উপরে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভীর পোশাক। কোট আছে, হ্যাট আছে, বুট আছে — শুধু মনে হয় প্যান্ট নাই। মূর্তিটি দেখেই এর ভাস্করের খোঁজ নিলাম। পেলে বলতাম – ‘জনাব, এই হাফ-ন্যুড ভাস্কর্যের মাধ্যমে আপনি কি বোঝাতে চাইলেন? এর মাধ্যমে ক্যাপ্টেন কুকের কোন বিশেষ দিক তুলে ধরেছেন, মহাশয়?’ আফসোস ভাস্কর মিস্টার মার্ক ক্লার্কের খোঁজ ওখানকার কেউ দিতে পারলেন না। কিন্তু পুত্র নিয়ন মূর্তিটা দেখে মহাখুশি। উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠলো –
‘বাবা, ওই দেখো – পুতুল।’
আমি বললাম – ‘হুম, পুতুল। বড় পুতুল। সুন্দর পুতুল।’
এবারে প্রশ্ন – ‘বাবা, পুতুলটার প্যান্ট নাই?’
আমি মোটামুটি কট!
একটু ঢোক গিলে বললাম, ‘পুতুলটাও তোমার মত শিশু। তুমিও মাঝে মাঝে প্যান্ট পরো না। পুতুলটাও পরে না।’
- ‘তুমি পুতুলটাকে একটা প্যান্ট কিনে দিও।’
২৪ ডিসেম্বর, ক্যানবেরা, © সুজন দেবনাথ