‘তোমরা সবাইকে ভালোবাসো। আমি তো তোমাদের সবাইকে ভালোবেসেছি, তাই তোমরাও অবশ্যই ভালবাসবে।’ — যিশু।
নটরডেম কলেজে পড়ার সময় যিশুর কটা বানী অনেক ভালো লেগেছিলো। তার মধ্যে মানুষকে ভালোবাসা নিয়ে যে কথাগুলো ছিলো, সেগুলো আজো মনে গেঁথে আছে। ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর কিছু মনে হয় ঈশ্বরও আবিষ্কার করতে পারেননি।
গ্রীসে ওরা খ্রিস্টমাস বলে না, বলে এক্সমাস। গ্রিকভাষার এক্স দিয়েই যিশুকে বুঝায়। গতকাল এক্সমাসের আগের দিন খুব সকালে কলিংবেলের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। এতো সকালে এখানে আমাকে জ্বালানোর কেউ নেই। তাহলে কে আসলো? চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলতেই কিছু ছোট্ট বাচ্চা গান শুরু করলো। খ্রিস্টমাস কেরোল। গ্রিক ভাষায় গাইছে, আমি কিচ্ছুই বুঝতে পারছি না। গান থামালে বোকা বোকা ভাব করে বললাম – ‘হুম, অনেক কষ্ট করে তো গেয়েছো, কিন্তু আমি তো বুঝি নি। এবার আর একটু কষ্ট করে আমাকে বুঝিয়ে দাও – কি গাইলে’।
বাচ্চারা ভীষণ অবাক। গান গেয়ে আবার অর্থ বলে দিতে হয় নাকি! এমন বোকা মানুষ ওরা জীবনে আর দেখেনি। বোকাদের নিয়ে তো মজা করাই যায়। ওদের চোখে-মুখে ভীষণ খুশি। আমি বললাম, ‘ধরো, তোমরা আমার টিচার, এবার আমাকে বুঝাও’। সবাই চিৎকার করে উঠলো। খেলাটা মনে হয় মন্দ না – টিচার টিচার খেলা। কিচিরমিচির ইংরেজিতে আমার টিচাররা গানের অর্থ বুঝাতে শুরু করলো। কিন্তু টিচারদের ধৈর্য্য অনেক কম। একজন একটা বাক্য শুরু করে, তো আরেকজন মাঝের অংশ বলে ফেলে, আবার তাঁকে থামিয়ে দিয়ে পেছন থেকে অন্যজন বাক্যটা শেষ করে। একজন যখন বলে, বাকিরা সবাই একসাথে হাসতে থাকে, কিচ্ছু শুনা যায় না। এতোগুলো টিচারের অসীম চেষ্টা সত্ত্বেও আমি শুধু দুইটা শব্দ বুঝলাম – লাভ আর স্লিপ।
ওরা কি যীশুর ভালোবাসার ডাকে ঘুম ভাঙাতে চাইছে? আমার মনে পড়লো – ছোট বেলায় এক বৈষ্ণবী খুব সকালে এসে গাইতো, ‘জাগো গো, ও শ্যামের মনমোহিনী কমলিনী রাই’। সে কৃষ্ণের ভালোবাসার ডাকে রাধাকে জেগে উঠতে বলতো। আর এই বাচ্চারা যিশুর ভালোবাসার ডাকে আমাকে জেগে উঠতে বলছে। ভালোবাসার ডাক অবহেলা করার ক্ষমতা মানুষের নেই। একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বললাম – মেরি খ্রিস্টমাস।
২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, এথেন্স © সুজন দেবনাথ