কীর্তিনাশা -এর নির্বাচিত অংশ
#
আকাশই ছিল আমার শৈশবের ফেইসবুক।
— ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ
#
জগতের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে প্রেম। নির্বাক চোখে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকা প্রেমিক যুগলই আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। আমার মনে হয় – আমি যদি সারা জীবন মায়ের কোলে শিশু অথবা প্রেমিকার চোখে প্রেমিক হয়েই থাকতে পারতাম – আর কিছু চাইতাম না।
— ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ
#
চুল আর ভুল সংখ্যায় ব্যাস্তানুপাতিক
— ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ
‘কীর্তিনাশা’ গল্পগ্রন্থের ‘চুড়িকন্যা' ছোটগল্পের অংশঃ
‘প্রিয় গল্পওয়ালা,
আমি জানি, তুমি আমাকে চুড়িকন্যা বলো। কিন্তু কখনো সরাসরি এই নামে ডাকোনি আমাকে। কেন ডাকোনি? সাহস হয়নি, তাইনা? তোমার মত ভীতু ছেলে আমি জীবনেও দেখিনি। তুমি কি জানো – একবার তোমার মুখে এই নামটা শুনতে কী ভীষণ ইচ্ছা করত আমার। নামটা শুনতে আমি কত ছল করেছি তুমি বুঝতেও পারোনি। আমার কেবলই মনে হত – যেদিন তুমি আমাকে এই নামে ডাকবে, সেদিন বুঝি আমি মরেই যাব। কিন্তু কোনদিনই তুমি এই নামে ডাকোনি।
তাই তোমার গল্পে যখন চুড়িকন্যার কথা বলতে, আমি নেচে উঠতাম। আমার ভেতরের আমিই উড়তাম পাখি হয়ে। অবশ্য আমার নাচার কথা তুমি কোনদিন বুঝতেও পারোনি। আসলে তোমাকে বুঝতে দেইনি। কেন দেইনি? কি জানি, মেয়েরা বোধ হয় এমনই হয়।
আমার বাবা আসলে আমাকে বিয়ে দেবার জন্য মামার বাড়ি নিয়ে এসেছে। ছেলে ইতালী থাকে, বাবা-মার খুব পছন্দ। কিন্তু তুমিই বলো গল্পওয়ালা, আমি না তোমার সেই ভুল গল্পের জুলিয়েট? আমার রোমিও কি তুমি ছাড়া অন্য কেউ হতে পারে? এখন আমি কি করব, গল্পওয়ালা? আমি কি সত্যি সত্যি জুলিয়েট হয়ে আকাশে চলে যাব? কিন্তু আমার যে এখনও শুধু তোমার আকাশেই আসতে ইচ্ছে করে।
বাবা নিশ্চয়ই তোমাকে একটা বই দিয়েছেন। এটা তোমার লেখা গল্পের বই। অবশ্য তোমার লেখা না বলে তোমার বলা গল্পের বই বলাই ভাল। কারণ গল্পগুলো তোমার বলা, আমার লিখা। একদিন জানতে চেয়েছিলে, তুমি যখন গল্প বলো, আমি তখন মোবাইলে কি করি। আজ বুঝেছ? আমি তখন রেকর্ড করতাম তোমার কথা। আর বাসায় ফিরে লিখে ফেলতাম।
বইয়ের নামটা তোমার পছন্দ হয়েছে? নাম দিলাম ‘ভুলগল্প’। পছন্দ হয়নি তোমার? না হলেও কিচ্ছু করার নেই। আমার পছন্দই শেষ কথা, তাইনা? মনে আছে তোমার - তুমি আমাকে প্রথম যেদিন গল্প বলেছিলে সেদিন একটা ভুলগল্প বলেছিলে? আমি শুরু করলাম সেই ভুলগল্পটাকে শুদ্ধ করতে। দুদিনেই টের পেলাম, তোমার জীবনটাও আসলে একটা ভুলগল্প। আমার খুব ইচ্ছা হল তোমার জীবনের ভুলগল্পকেও আমি শুদ্ধ করে দেই। ধীরে ধীরে সেই ভুলগল্পের মায়ায় আমি জড়িয়ে গেলাম। একদিন বুঝলাম – এই মায়া থেকে আমার মুক্তি নেই। যাক ওসব কথা।
তুমি কি জান – তুমি পৃথিবীর সেরা একজন গল্পকার। জানি, এটা তুমি জান না। কিন্তু আমি জানি। সেজন্যেই আমি তোমাকে গল্পওয়ালা নামে ডাকছি। বইটা পড়ে ফেল। বিশ্বাস হয় - এইটা তোমার লেখা! এখানে পৃথিবীর কয়েকটি সেরা গল্প আছে। আমি জানি এমন গল্প তুমি প্রতিদিন বানাতে পার। আর থেমো না। আমি তোমার জীবনের ভুলগল্পকে শুদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। এটাই সেই উপায়। শুধু ভাববে – তোমার চুড়িকন্যা তোমার সামনে বসে আছে, আর তুমি তাঁকে গল্প শোনাচ্ছ। সেটাই লিখে বই করবে।
তুমি কি জান আমার সবগুলো চুড়ি পরে আমি তোমাকে দেখিয়েছি? আজ থেকে ঠিক দুদিন পরে বাবা তোমার কাছে আমার সবগুলো চুড়ি পাঠিয়ে দেবে। জানি, কেবল তুমিই ওগুলোর যত্ন করবে। আর তোমার প্রতিটা বই প্রকাশের দিন আমার জন্য একটা করে চুড়ি কিনবে। আমি জানি - একদিন তোমার পুরো লেখার ঘর চুড়িতে ভরে যাবে। আর আমি হাসতে থাকব লেখার পাতায় পাতায়। সেদিন তুমি হাসবে না? বলো গল্পওয়ালা, তুমি হাসবে না?
ইতি,
তোমার চুড়িকন্যা
— ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ
#
যে কোন অবস্থায় ভালোবাসার কথা বলতে, শুনতে আমার ভাল লাগে। পড়তেও ভাল লাগে। পৃথিবীর সকল কালজয়ী সাহিত্যই নাকি আসলে প্রেমের সাহিত্য।
— ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ
#
এ রকম আগুন রঙের ভাষা আর কারো নেই। এমন রক্ততিলকপরা বর্ণমালা ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও খুঁজে পাবে না।— ‘কীর্তিনাশা’ © সুজন দেবনাথ
অনলাইনে প্রাপ্তিস্থান: