Select Page

‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ একটি পাঠক নন্দিত ঐতিহাসিক উপন্যাস। সক্রেটিস, প্লেটো, হেরোডটাস, সফোক্লিসের সময়ে সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণতন্ত্র, চিকিৎসা, দর্শন, থিয়েটারের জন্ম এই গল্পের পটভূমি। এথেন্স শহরের পটভূমিতে অন্ধকার থেকে আলোর জন্মের কাহিনী নিয়ে বাংলা ভাষায় এই ধরনের গল্প এটিই প্রথম। গ্রিসের ক্ল্যাসিকাল সময় নিয়ে এমন বই বিশ্বসাহিত্যেই নেই। এই বইয়ের গল্পটি এথেন্সের ‘অদিও ইথেন’ বা ‘সক্রেটিস কমিউনিটি’ নামে একটি গ্রিক সংগঠন কর্তৃক ২০২০ সালে সক্রেটিসের জন্মদিনে উপস্থাপনের জন্য সেরা গল্প হিসেবে নির্বাচিত হয়। দেশ বিদেশের সক্রেটিস বিশেষজ্ঞগণ অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন এই বইয়ের।    

হেমলকের নিমন্ত্রণ

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এথেন্স নামের একটি ছোট্ট শহরে সক্রেটিস, প্লেটো, হেরোডটাস, সফোক্লিসের মত কয়েকজন প্রতিভাবান মানুষ অদ্ভুত এক পাগলামি শুরু করেছিল। তাদের পাগলামিতে মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে অন্ধকার থেকে জন্ম নিয়েছিলো আলো। সময়টি ছিলো খ্রিস্টের জন্মের আগের পঞ্চম ও চতুর্থ শতক। এই সময়কে পণ্ডিতেরা বলেন গ্রিসের ক্লাসিক্যাল সময়। এসময় এথেন্স এবং এর আশেপাশের শহরগুলিতে জন্ম হয়েছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা। একই সময়ে, একটি শহরে বুদ্ধিবৃত্তির এরকম স্ফুরণ পৃথিবীর ইতিহাসে আর হয়নি। এথেন্স শহরে  সেই রোমাঞ্চকর আলোর জন্মকথাকে একটি গল্পে নিয়ে এসেছেন সুজন দেবনাথ। অনাবিল মায়াভরা সেই গল্পের নাম ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’।  

এই বইয়ের কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়। মূল চরিত্র দর্শনের জনক সক্রেটিস। এই গল্পে সক্রেটিস দুষ্টুমি আর রসিকতায় সুন্দর জীবনের কথা বলছেন। সেই রসিকতা থেকেই প্লেটো শিখছেন জীবনের মানে। একই সাথে সক্রেটিস একজন তুমুল প্রেমিক। স্ত্রীর সাথে খুনসুটি করছেন, ঝগড়া করছেন। আবার চুপিচুপি যাচ্ছেন বুদ্ধিমতী মেয়ে আসপাশিয়ার কাছে। এক বয়স্ক নারীর কাছে শিখছেন প্রেম। প্লেটো খুঁজছেন – শরীরের আকর্ষণ ছাড়া সাধু-সন্ন্যাসী ধরণের প্লেটোনিক প্রেম। প্লেটো তার কবিতা, নাটক সব পুড়িয়ে দিচ্ছেন – তিনি কবি থেকে হয়ে যাচ্ছেন কঠিন এক দার্শনিক। তার আদর্শরাষ্ট্র থেকে কবি-সাহিত্যিকদের নির্বাসন দিচ্ছেন।

ইতিহাসের জনক হেরোডটাস এথেন্সে আসছেন। তিনি লিখতে শুরু করেছেন পৃথিবীর প্রথম ইতিহাস বই। প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে অলিম্পিক গেমস। সভ্য উপায়ে – মানে মারামারি কাটাকাটি না করে, বীর হবার লড়াই। সেখানে হেরোডটাস বলছেন ম্যারাথন যুদ্ধের কথা। এক বিকেলে সফোক্লিস লিখতে বসলেন সর্বকালের সেরা ট্রাজেডি ‘রাজা ইদিপাস’। কিন্তু কে আসলে ইদিপাস? কে সেই ব্যভিচারী? গণতন্ত্রের নেতা পেরিক্লিস বিয়ে করতে পারেননি প্রেমিকা আসপাশিয়াকে। অথচ তাদের সন্তান আছে। এই ব্যভিচারের জন্য তিনিই ইদিপাস। তাকে নিয়েই সফোক্লিস লিখছেন রাজা ইদিপাস। এক সকালে ট্রাজেডি নাটকের জনক ইস্কিলাস অভিনয় করছেন ‘প্রমিথিউস বাউন্ড’। নাট্টকার ইউরিপিডিস গুহায় বসে লিখছেন নাটক ‘ট্রয়ের মেয়েরা’। পিথাগোরাস বের করছেন জ্যামিতির সূত্র, ‘গোল্ডেন রেশিও’। সেই রেশিও দিয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ভবন পার্থেননের ডিজাইন করছেন শিল্পী ফিডিয়াস। তার আঁচড়ে   বদলে যাচ্ছে বাড়ি-ঘর বানানোর শিল্প। চিকিৎসাবিদ্যার পিতা হিপোক্রাটিস লিখতে বসেছেন ডাক্তারদের ‘হিপোক্রাটিক শপথ’।

এথেন্সের মানুষ রাজা-রাণী বাতিল করে দিচ্ছে, আবিষ্কার করছে গণতন্ত্র, পাহাড়ের উপরে বসছে পৃথিবীর প্রথম সংসদ। সেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবার উচ্চারিত হচ্ছে সমান অধিকারের কথা, আইনের শাসনের কথা। সক্রেটিস যাচ্ছেন সেই গণতন্ত্র দেখতে। তার ভালো লাগছে না। তার ভাল না লাগাটা ছড়িয়ে পড়ছে প্লেটোর মধ্যে। সক্রেটিসকে নিয়ে কমেডি নাটকের জনক এরিস্টোফানিস লিখছেন প্রহসন নাটক ‘মেঘ’। কিছু মানুষের গোঁড়ামির জন্য হত্যা করা হচ্ছে সক্রেটিসকে। তিনি আসামী হয়ে দাঁড়াচ্ছেন আদালতে। শান্তভাবে চুমুক দিচ্ছেন হেমলক পেয়ালাতে।

এরকম অসংখ্য কথা একটি গল্প হয়ে সেই সময়টিকে আমাদের সামনে জীবন্ত করে নিয়ে এসেছে -‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’। এই উপন্যাসের কাহিনীর পটভূমি খ্রিস্টের জন্মের আগের পঞ্চম শতক। দিনক্ষণ ধরে বললে খ্রি: পূ: ৫১০ থেকে ৩৯৯ পর্যন্ত। ঐ সময়ে একঝাঁক মনীষী মেতে উঠেছিল সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। সেই উল্লাসে একে একে জন্ম নিয়েছিল আজকের জ্ঞান বিজ্ঞানের সব কিছু। সেই জন্মের গল্পই সুজন দেবনাথের প্রথম উপন্যাস ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’।

প্রকাশক:
অন্বেষা প্রকাশন
৯ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
ফোন: ০১৯১১৩৯৪৯১৭

প্রাপ্তিস্থান:
পাঠক সমাবেশ (ঢাকা)
বাতিঘর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট)।

অনলাইনে প্রাপ্তিস্থান:
রকমারী.কম
বাতিঘর
অথবা.কম

বুক রিভিউ: