Select Page

অনেকদিন আগে শীর্ষেন্দুর একটা লেখায় গল্পটা পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল এরকম –
তখন ব্রিটিশ আমল। থিয়েটার হচ্ছে। রাম-সীতার কাহিনী। সেই থিয়েটার দেখতে এসেছেন ব্রিটিশ ভারতের বড়োলাট স্বয়ং। তো মঞ্চে রামায়নের কাহিনী চলছে। পিতার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় রাম বনবাসে যাচ্ছেন। সঙ্গে সীতা আর লক্ষ্মণ। খুব করুণ কাহিনী। সবাই কাঁদছে। মা কাদছে, বাবা কাঁদছে, প্রজারা কাঁদছে। খালি কান্না আর কান্না। এতো কান্না দেখে সাহেব তো মহা বিরক্ত। ছোঁ, এই নাকি বাংলা থিয়েটার! কোন মজা নেই, হুদাই কান্নকাটি করে। তিনি রাগে গজ গজ করতে লাগলেন। যাই হোক কাহিনী আরো কিছুদূর আগালো।

তবু কান্নাকাটি থামে না। সাহেব তখন প্রায় উঠে যায় আর কি! সেই সময় হঠাৎ রঙ্গমঞ্চে এলো হনুমান। এসেই শূরু করল তাঁর লম্ফ-ঝম্ফ। হুনুমানের ইচিং বিচিং লাফ দেখে সাহেব তো মহাখুশী। হ্যাঁ, এইবারে একটা মজার জিনিস এসেছে। এই না হলে থিয়েটার! আনন্দে গদগদ হয়ে সাহেব হনুমানকে ১০০ টাকা ছুঁড়ে দিলেন। আর হুংকার করলেন, “মোর হনুমান (More Hanuman)”. মানে সাহেব আরো হনুমান দেখতে চান।
থিয়েটারের মালিক হন্ত-দন্ত হয়ে আরো একজনকে হনুমান বানিয়ে মঞ্চে নিয়ে এল। যদিও রামায়নে হনুমান চরিত্র একটাই। থিয়েটারের মালিক ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি বোঝেন কোন দেবতা কিসে তুষ্ট হয়।

আর একটা হনুমান দেখে সাহেব মহা খুশি। আরো ১০০ টাকা ফেলে দিয়ে আবার বলল, “মোর হনুমান !”
তো আসলো আরো একটা হনুমান। সেই আমলে ১০০ টাকা মানে বিশাল টাকা। মঞ্চে একটা করে হনুমান আসে আর সাহেব ১০০ করে টাকা ছুঁড়ে দেন।

এভাবে রাম-সীতা-লহ্মণ যে যা সেজেছিল, সব বাদ দিয়ে সবাই হনুমান সেজে মঞ্চে চলে এল। শুরু হল লম্ফ-ঝম্ফ। সারা মঞ্চ জুড়ে শুধু হনুমান আর হনুমান। কোন রাম নেই। কোন সীতা নেই। তখন রাম-সীতার কোন দরকার নেই। শুধু হনুমান হলেই হবে।
গল্প এখানেই শেষ।

সেদিন ওই ইংরেজ বড়লাট বাংলার সকল রাম-সীতাদেরকে হনুমান বানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই বুঝি এখনো আমরা সবাই হনুমান হতে চাইছি। শুধু লাফ-ঝাঁপ দিতে পারলেই হলো। মানুষ হয়ে কী হবে? রাম হয়ে কী হবে? সীতা হয়ে কী হবে? আমরা হনুমানই হব-এটাই হল এমবিশান।

© সুজন দেবনাথ