Select Page

বউ কথা কও। আমার সবচেয়ে প্রিয় পাখি। কিশোর বেলার পাখি।
চৈত্রের ঝাঁ ঝাঁ রোদ – কিশোর মনে একটা নাই নাই আঁকিবুঁকি। কিচ্ছু ভাল্লাগে না। হঠাৎ আমের মুকুলে ডেকে উঠত – বউ কথা কও। ঠাকুরমা বলতো, বউ কথা কও ভীষণ আদুরে পাখি। একটু খেয়ালিও। সব সময় তোমার ঘরে থাকবে না। ও দোলে আসে, রথে যায়।

মিলিয়ে দেখতাম। ফাল্গুনের দোল পূর্ণিমার আশে-পাশের সময় থেকেই ওই ডাক শুনা যেত। আবার রথযাত্রার কাছাকাছি ঠিক বর্ষার মাঝামাঝি থেকেই বন্ধ।

বউ কথা কও পাখির এই দোলায় চড়ে আসা আর রথ হাঁকিয়ে ফিরে যাওয়ার ব্যাখ্যা বাংলাদেশের পক্ষিবিদরা বলতে পারেন। আমি এথেন্সে। আমি বড়োজোর চোখ বুজে বাংলাদেশের বউ কথা কও পাখির কথা ভাবতে পারি।

ভাবতে ভাবতে রাত ২টা ৯ মিনিট। আমার শোবার ঘরের বেলকনি। একটু দূরেই একটা পাহাড়। নাম ইমিতোস। চাঁদের আবছা আলো পাহাড়ের গায়। অলস ভাবে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ বাঁক নিয়েছে পাহাড়টা। নেমে গেছে এজিয়ান সাগরে। চাঁদের আলোতে সাগরের জল কুচকুচে কালো। জল থেকে উঠে আসছে একটা নিশাচর পাখি। মন বলছে পাখিটা একবার ডেকে ওঠুক। এই চাঁদ-ছোয়া রাতে শত শত বিরহী প্রাণের সাথে ফিস ফিস করে বলে উঠুক – ‘বউ কথা কউ – বউ কথা কউ’। আমার একাকী রাতের বউ – কথা কও। কথা কও।

না, বউ এখন কথা কইবে না। সে দোলে আসে, রথে যায়। দোল পূর্ণিমার আগে সে আসবে না। বসন্ত ছাড়া প্রেম আসে কি?
……………………
বউ কথা কও – দোলে আসে রথে যায় // © সুজন দেবনাথ