Select Page

শিক্ষাজীবন আসলে পাখির জীবন। ক্যাম্পাস মানেই এক ঝাঁক মুক্ত বিহঙ্গ। মুক্তচিন্তার মুক্তডানা। তাঁরা উড়ছে। হাসতে হাসতে উড়ছে। উড়তে উড়তে হাসছে। এরকম অকারণে হেসে ওঠা জীবন ক্যাম্পাসের বাইরে কোথাও নেই। এই হেসে ওঠা জীবন ভালোবাসি। এই পাখি-জীবন ভীষণ ভালোবাসি।

ভালবাসি নিজে উড়তে। ভালোবাসি পাখিদের ওড়াওড়ি দেখতে।

তুমি ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী? ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছ? খুব ভালো – আই লাইক ইট। তুমি জীবনকে সুন্দর করতে চাচ্ছ। তোমার জীবনের এজেন্ডা লিখতে বসেছ। তোমার এই ভাবনাকে স্বাগতম। কিন্তু সেই ভাবনায় এখনই চাকরির পরীক্ষার পরামর্শ চাচ্ছ? কেন? সুন্দর শিক্ষা জীবনের শুরুতেই একটা চাকরিকে টার্গেট করে ফেলেছ? শুধু একটা চাকরি পাওয়াকেই জীবন বলে ধরে নিয়েছ? আই ডোন্ট লাইক ইট। তবে এজন্য তুমি দায়ী নও। দায়ী সময়। সময় তোমাকে এক লাইনে চিন্তা করতে শিখাচ্ছে। চোখকে এক জায়গায় নিয়ে গেছে। তোমাকে কিছু চমৎকার জিনিস ভুলিয়ে দিয়েছে। Decision is a complex equation of information, interpretation, advice, experience and options. এই জটিল ইকুয়েশানে তোমার অপশনের জায়গাটা ভুলে গেছো। কিন্তু জীবনের এজেন্ডা লিখতে হলে অপশন জানা ভীষণ জরুরি। তো তোমার জন্য আমার পছন্দের অপশন:

প্রথম অপশন: তুমি বিজ্ঞানী হবে – গবেষক হবে। যেই শাখায় পড়ছো – সেটাতে বা অন্য কোথাও। পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞানে কিছু একটা যোগ করার জন্যই তুমি এসেছ। সেজন্যেই পড়াশুনা করছ। তুমি চাইলেই সেটা সম্ভব। নিজের সাবজেক্টের পটেনশিয়াল দিকটা অবশ্যই খুঁজে দেখো। সেই সাথে নিজের একান্ত আনন্দের জায়গাটাও মাথায় থাকুক – তুমি সাহিত্যিক হবে, কবি হবে, শিল্পী হবে, সিনেমা বানাবে, শখের ফটোগ্রাফার হবে, হাইকিং করবে, সাংবাদিকতা করবে – যা ভালো লাগে । Options are flying – focus your eyes and catch your one.

দ্বিতীয় অপশন: নিজে উদ্যোক্তা হও, একটা ব্যবসার প্লান মাথায় রাখতেই পারো। তুমিই চাকরি দিবে। অন্যের অধীন নয় – নিজেই নিজের বস হবে। সেটা যে পাশ করেই করতে হবে – এমন নয়। টাকা আর সাহস থাকলে পাশ করেই শুরু করা যায়। আবার কিছুদিন চাকরি করে, অভিজ্ঞতা নিয়ে তারপরও করা যায়। মানে নিজেই একদিন বস হবে – এই কথাটা মাথায় রেখো। চাইলেই সম্ভব। যে পরিমাণ বিবিএ/এমবিএ পাশ করা (আমিও তাঁদের একজন) ছাত্র-ছাত্রী আমাদের দেশে আছে, তাঁদের ৫% যদি সিরিয়াসলি ব্যবসায় নামে – চাকরি বাড়বে গুনোত্তর হারে। কয়েক বছরে দেশের চাকরির সংস্কৃতিই পাল্টে যাবে। তখন চাকরির পরীক্ষায় FDI (Foreign Direct Investment) নয়, রচনা আসবে – ‘সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী’। তাই নিজের জন্য এবং দেশের জন্য এটা মাথায় রেখো।

তৃতীয় অপশন: ওই দুটো না পারলে – সহজ পথ – চাকরির চেষ্টা করবে। সেটা সরকারী/ প্রাইভেট/ মাল্টিন্যাশনাল/ এনজিও/ ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান সব ধরনের জবের কথাই মাথায় রেখো। একটাতে ফিক্সড হয়ে যেও না। Diversity is beauty.
এই চলার পথে – যেদিন নিজেকে যোগ্য মনে করবে – সেদিন থেকেই রাজনীতি করবে। দেশ পাল্টাতে দরকার যোগ্য নেতৃত্ব। আর ভাল ছেলে-মেয়েরা রাজনীতি করলেই শুধু ভবিষ্যতের নেতৃত্ব যোগ্য হবে। শাসক হবে – না শাসিত হবে – তোমার চয়েস। নিজে দেশকে পাল্টানোর চেষ্টা করবে – নাকি নিজে কিছুই না করে যারা পাল্টানোর চেষ্টা করে – আরাম করে তাঁদেরকে গালি দেবে – তোমার চয়েস। তুমি ভালো মানুষ হলে – তোমারই রাজনীতি করা উচিত।

আর মানুষের জন্য কিছু করার প্লান সব সময় মাথায় রেখো। ভালো ক্যারিয়ারের সাথে সাথে এটাও জীবনের ঐশ্বর্য্য। ‘Heal the world, make it a better place – for you and for me, and for the entire human being’ – Michael Jackson.
উপরের কথায় কনভিন্সড? চাকরি করবে না? তাহলে সুন্দর প্লান করে এগিয়ে যাও। নিচের লেখা পড়ার আর দরকার নেই। এরপরও যদি ক্যারিয়ার নিয়ে এখন থেকেই কিছু করতে ইচ্ছে করে তাহলে কনটিনিউ কর:

টার্গেট-১: রেজাল্ট ভালো করতে হবে। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হলে জীবনের সব লাইন খোলা থাকবে। তখন যেদিক খুশি, সেদিকেই যেতে পারবে। রেজাল্ট খারাপ করেও প্রফেশনাল লাইফে অনেক ভালো করা সম্ভব। কিন্তু রেজাল্ট ভালো যাঁদের, তাঁরা সব সময়ই এডভানটেজ পায়। বিল গেটস তো কলেজ ড্রপ। তার মানে বিল গেটস হতে গেলে তো পড়াশুনার দরকার নেই? কিন্তু জনাব – বিল গেটস কাদের নিয়ে মাইক্রোসফট চালাচ্ছে? তাঁরা কি সব কলেজ ড্রপ? স্টিভ জবসের অ্যাপল কোম্পানীর ইনোভেশন টিমে কারা ছিল বা আছে? আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র-ছাত্রীরাই এসব কোম্পানী চালায়। তাই একাডেমিক রেজাল্ট সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁদের রেজাল্ট তেমন ভালো নয়, তাঁদের সব কিছু শেষ হয়ে যায় নি। তাঁদের অনেক পথই খোলা। কিন্তু যাঁদের রেজাল্ট ভালো, তাঁদের রাস্তা আরো বিস্তৃত – আরো বহুমুখী। তাই একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করাই প্রথম টার্গেট।

টার্গেট-২: শিক্ষা জীবনের সময়টাকে এনজয় করো – ভালো কাজে, মানুষের জন্য। শিক্ষা জীবনে সময় থাকে অফুরন্ত আর মনটা থাকে সবুজ। এই কম্বিনেশান ভবিষ্যতে আসবে না। তাই ভবিষ্যতের জন্য কিছু সুন্দর স্মৃতি না রাখলে পরে আফসোস হবে। যেমন এখন আমার হয়। ভীষণ আফসোস হয়। ভার্সিটির সময়টাকে আর একটু ভালো কাজে লাগালে – জীবনের সঞ্চয় আর একটু বাড়ত। তাই কিছুটা সময় মানুষকে দাও। সেজন্য মানুষের উপকারের সংগঠন করতে পারো। কয়েক বন্ধু মিলেও ভালো কাজ করতে পারো। ব্যক্তিগতভাবেও করা যায়।

এই দুটো টার্গেট ঠিক রেখে যদি মনে করো সময় আছে – তাহলে জীবনের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য বা ক্যারিয়ারের জন্য নিচের বিষয়গুলোতে সময় দিতে পারো:

*বেসিক কম্পিউটার শিখবে। মানে মিনিমাম মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল। আনন্দের সাথে শিখবে। গুগল সার্চের টেকনিক (গুগলে সার্চের কিছু মজার বিষয় আছে, যা দিয়ে সহজে ভালোভাবে খুঁজে পাওয়া যায়) আর ইন্টারনেট ভালোভাবে ব্রাউজিং।

  • কম্পিউটারের বেসিক থিউরি মানে কিভাবে কম্পিউটার কাজ করে (টেকনিকাল টার্মসহ)। এজন্য HSC-র কম্পিউটার বইতেই হবে।
  • শুদ্ধভাবে ফ্রি হ্যান্ডে ইংরেজী লিখতে হবে। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এটাপারতেই হবে। HSC এর বোর্ডের ইংরেজি বইটা বেশ ভালো একাডেমিক ইংরেজিতে লিখা। ওইরকম হলেই হবে। ওটা ফলো করতে পারো।
  • ইংরেজি গ্রামারের একটা ভালো বই যেমন PC DAS বা Wren and Martin বা Raymond Murphy এর একটা গ্রামার বই দেখবে।
  • ইংরেজি ভোকাবিউলারিতে একটু একটু সময় দিও। একটা ভালো ভোকাবিউলারি বই কয়েকমাস নাড়াচাড়া করলে, সেটা ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ হবে। Word Smart (part I&II) ভালো চয়েস। আমি যেভাবে ভোকাবিউলারি পড়েছিলাম, সেটা নিয়ে আমার ১২ টা ছোট ছোট ভিডিও ইউটিউবে আছে – চাইলে ওগুলো দেখতে বা শুনতে পারো।
  • একটু ইংরেজি বলতে প্রাকটিস করো। নিজে নিজে বা বন্ধুর সাথে। ভবিষ্যতে চাকরি, ব্যবসা, বিদেশে পড়শুনা যাই কর – সবখানেই এটা লাগবে। ভালো স্পিকার হতে চাইলে – যে কোন একটা বিষয়ে নিজে নিজে ইংরেজিতে বলে মোবাইলে রেকর্ড কর। রেকর্ড শুনলে নিজেই বুঝবে – কিভাবে উন্নতি করা যায়। ২য় রেকর্ডেই দেখবে উন্নতি হচ্ছে। এভাবে কয়েকবার করলেই ওই বিষয়ে ভালো স্পিকার হয়ে যাবে।
  • ক্লাশ Viii& ix এর ম্যাথ বই দেখবে – যদি মনে করো ওখানের কোন একটা কিছু পারো না, সেটা দেখবে। এখন মজা নিয়ে দেখবে – পারবে। এখন জ্যামিতি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ই জ্যামিতি ছাড়া চাকরির পরীক্ষায় উত্তর করা যায় না। ix এর বইয়ের জ্যামিতিগুলো বুঝে ফেলো। জ্যামিতি আগে ভালো করে না দেখে থাকলে কষ্ট হবে। একটু একটু করে বুঝ। একবার মজা পেলে আর কষ্ট হবে না।
  • যদি ভাবো তোমার হাতে অনেক সময় আছে – তাহলে ম্যাথের জন্য IBA এডমিশান টেস্ট বা যে কোন চাকরির গাইড থেকে কিছু ম্যাথ দেখতে পারো। ম্যাথ তাড়াতাড়ি করতে পারতে হবে।
  • সুন্দর বাংলা লিখতে অভ্যাস করবে। কিছু ভালো বাংলা সাহিত্য মজা করে পড়বে। সেইমত চেষ্টা করবে। চাইলেই সম্ভব।
  • ক্লাশ ix এর বাংলা ব্যাকরণ বইটা আগাগোড়া পড়ে ফেলবে। অনেকেই এটা স্কুলেইè ভালো করে পড়েছে। তাঁদের জন্য এটা হবে ডাল-ভাত। আর যারা আগে ভালো করে পড়োনি, তখন ভয় পেয়েছো – তারা এখন আনন্দের সাথে পড়। এখন তো পরীক্ষার জন্য না – জানার জন্য – তাই আনন্দের সাথে দেখ।
  • পত্রিকার খেলা আর বিনোদন পাতার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক পাতা, অর্থনৈতিক পাতাও একটু দেখ। জাস্ট ফান। যেই কলাম ভালো লাগে পড়তে পার। ইংরেজি পত্রিকা মাঝে মাঝে দেখ। এটা ইন্টারনেটেও দেখতে পার। এক মাস কষ্ট করে ইংরেজি পত্রিকা দেখলে – পরে আর সারাজীবনেও কষ্ট হবে না।
  • আর একাডেমিক বইয়ের বাইরে একটু-আধটু অন্য বইও পড় – পৃথিবী কিভাবে আজকের জায়গায় এলো – সেই কাহিনী মজার। জানতে খারাপ লাগে না।

লিখতে লিখতে অনেক কিছু লিখলাম। আবার মনে করিয়ে দেই – রেজাল্ট ভালো করতেই হবে। এটাই ফার্স্ট টার্গেট। তারপর সময় পেলে এগুলো করতে পারো – অবশ্যই আনন্দের সাথে। তাহলে এসো – এখনই চাকরির টার্গেট সেট না করি।

কী পাব – সেটা নিয়ে একটু রহস্য থাকুক! ওই রহস্যটাই জীবনের সৌন্দর্য্য। Man Likes Mystery and Woman Loves Mystery. তাই বলে ক্যারিয়ার বিষয়ে একেবারে অন্ধকারে নয় – অপশনগুলো জানা থাকুক। এখনই একটা জানালাও বন্ধ করব না। সকল দুয়ার খুলে শিক্ষাজীবন উপভোগ করব।

যেকথা দিয়ে শুরু করেছিলাম – শিক্ষাজীবন আসলে পাখির জীবন। এই পাখি-জীবন ভীষণ ভালোবাসি। ভালবাসি নিজে উড়তে। ভালোবাসি পাখিদের ওড়াওড়ি দেখতে।

পাখি তুমি ওড়ো – আকাশকে সীমানা করে ওড়ো – সকল দুয়ার খুলে ওড়ো – তোমার আপন আকাশে ওড়ো। আকাশ নেই? আকাশ তৈরি করো। তারপর ওড়ো। এ তোমার পাখি-জীবন। খুব অল্প দিনের জীবন। ওড়ার সময়টাও অল্প। ওড়া থামিও না।
…………………………………………………