Select Page

ডিসেম্বর ২০১৪। অস্ট্রেলিয়ার এডিলেইড।
ছোট্ট এই শহরটার ভেতর আবার জার্মান অভিবাসীদের একটা পাড়া আছে। সেই পাড়ার নামটাও ইউরোপীয়। জার্মানি আর নেদারল্যান্ডসের অলি-গলির নাম এরেনসডর্ফ, নেদারডর্ফ, ইগলুডর্ফ এরকম। আমাদের অনেক জায়গার নাম যেমন গঞ্জ, পুর; ওদের সেরকম ডর্ফ। এডিলেইডের এই পাড়াটির নামও হ্যান্ডডর্ফ। নাক-উঁচু জার্মান আর মাথা-উঁচু ডাচদের মত এডিলেইডের পাহাড়ি এলাকায় উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই হ্যান্ডডর্ফ। হিটলারের উত্তর-পুরুষরা এখনো সেখানে আছে।
অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যেন একটা ছোট্ট ইউরোপ এই হ্যান্ডডর্ফ। তবে এখনকার ইউরোপ নয়। কয়েক শতক-পুরুনো ইউরোপ। ম্যাক্সিম গোর্কির বর্ণনার জার্মানি যেমন, ঠিক সেই রকম।

এখনকার ইউরোপ কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে। সেই জৌলুস নেই। প্যারিসে ঘুরতে গিয়ে আমি ভীষণ হতাশ হয়েছিলাম। আমি প্যারিসকে প্রথম দেখেছিলাম সুনীল গাঙ্গুলী আর অন্নদাশংকর রায়ের চোখে। সুনীলের ‘ছবির দেশে, কবিতার দেশে’ পড়তে পড়তে আমি প্যারিসের শিন নদীর তীর ধরে ছোটবেলায় কত হেঁটেছি। অন্নদাশংকর রায়ের ‘পথে-প্রবাসে’র প্যারী নগরী তো আমার চোখে মায়াপুরীর স্বপ্ন। কিন্তু একুশ শতকের প্যারিস দেখে আমি সেই ছবির দেশটা একটুও পাইনি। কবিতার দেশটার মায়াপুরীর স্বপ্ন কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ২০১২ তে প্যারিস দেখে বলে উঠেছিলাম – তুমি আর নেই সে তুমি।

কিন্তু এডিলেইডের হ্যান্ডডর্ফ দেখে মনে হল সেই উনিশ শতকের ইউরোপ। সেই গোর্কির জার্মানি। চোখ ঝলসানো সুন্দর নয়; তবে শালীন, পরিমিত রূপের কুট্টি কুট্টি বাড়ি। মিনি জাদুঘরের মত ছোট্ট ছোট্ট দোকান। দুধের স্বাদ ঘোলেই মিটল। ইউরোপে গিয়ে উনিশ শতকের ইউরোপ পাইনি। তাঁর ছোট্ট একটা ছবি পেইয়েছিলাম এডিলেইডে।

ধন্যবাদ বন্ধু রুমন রহমান আর মেসবাহ মোহাম্মদ। ওরাই নিয়ে গিয়েছিল ওখানে।