১৯২৬ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটানা ছয় মাস ইউরোপের কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেন। সেই ভ্রমণ ছিলো একই সাথে সফল এবং কিছুটা বিতর্কিত। ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনির আতিথ্য নেবার সমালোচনার সাথে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য ইউরোপের প্রতিটি নগরে হাজারো মানুষের ভীড়ও চোখে পড়ার মতো ছিলো। কিন্তু এই রোমাঞ্চকর বিরলভ্রমণের বিবরণ কোথাও নেই বলে কবির আক্ষেপ ছিলো। ১৯৪১ সালে ৬ই এপ্রিল তিনি লিখেছিলেন,
“এই আশ্চর্য ইতিহাসটিকে লিপিবদ্ধ করিবার জন্য বাহিরের সাক্ষ্যর প্রয়োজন আছে। তাঁর ভ্রমণসঙ্গীদের লিখেছেন, যা কোথাও প্রকাশ পেলো না তার দাম খুব বেশি।“
এই অপ্রকাশিত অধ্যায়ের কিছু অংশ উপস্থাপন করেছেন, কথা সাহিত্যিক, গবেষক ও কূটনীতিক সুজন দেবনাথ। ১৯২৬ সালের সেই সফরে কবি গ্রিস ভ্রমণ করেন। এযাবৎ কালে প্রকাশিত কবির জীবনীর কোথাও গ্রিস সফরের বিস্তারিত কিছু নেই। লেখক এথেন্সে বাংলাদেশ দুতাবাসের কূটনীতিক হিসেবে অবস্থানকালে কবি গুরুর এই এথেন্স ভ্রমণ নিয়ে একটি মৌলিক গবেষণার কাজ করেন। গল্পের মতো করে লেখা এই গবেষণার ফসল –
“হোমারের দেশে রবীন্দ্রনাথ”
কয়েকটি ভাগে তিনি তাঁর গবেষণাকে সাজিয়েছেন।
(১)বইটির প্রথম অংশে কবির এথেন্স ভ্রমণ নিয়ে গল্প যেখানে কবি জাহাজে করে ইস্তাম্বুল থেকে এথেন্স শহরে যাচ্ছেন, যেতে যেতে তার মনে পড়ছে অনেক বছর আগে এরকম এক জাহাজে বসে গ্রিসের দ্বীপ দেখে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে চিঠি লিখেছিলেন। তার মনে মৃণালিনীর জন্য হাহাকার জেগে ওঠছে। এথেন্সেদেবীর মূর্তি দেখে প্রথম জীবনের কবিতার অনুপ্রেরণা বৌদি কাদম্বরী দেবীকে মনে পড়ছে যাকে তিনি গ্রিক দেবী ‘হেকেটি’ নামে ডাকতেন। তরুণ বয়সে হোমারের মহাকাব্যের সাথে তুলনা করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যের নিষ্ঠুর সমালোচনা করেছিলেন। গ্রিসের মাটির পাত্র দেখে কবির মনে হয় – এরকম একটি গ্রিক পাত্র দেখেই ইংরেজ কবি কিটস লিখেছিলেন ‘Beauty is truth, truth beauty’, এই একটি লাইন দিয়ে কবিতার ইতিহাসকেই পাল্টে দিয়েছিলেন কবি কিটস। কিটসের এই কবিতাটি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বড় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এরকম গল্পে এগিয়ে গেছে ‘সক্রেটিসের নগরে রবীন্দ্রনাথ’।
(২) বইটির দ্বিতীয় অংশে রবীন্দ্রনাথের এথেন্স ভ্রমণ নিয়ে কয়েকটি মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধ।এথেন্সে রবীন্দ্রনাথের নয় ঘণ্টা।
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে রবীন্দ্রনাথ।
অলিম্পিক সঙ্গীতের রচয়িতা বিখ্যাত গ্রিক কবি কস্টিস পালামা এবং কবি এঞ্জেলো সিকেলিয়ানোসের সাথে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ।
রবীন্দ্রনাথের চোখে গ্রিক: কবি তার রচনায় কিভাবে হোমারের রচনা, কিটসের গ্রিস বিষয়ক লেখাগুলোকে এনেছেন সেগুলো এসেছে।
লেখকের গ্রিসে অবস্থান করার কারণে এই গবেষণার কাজসহজ ভাবে পাঠকের বোধগম্যতার উপযোগী করে লেখা সুগম হয়েছে।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অজানা অধ্যায় জানতে হলে বইটি পড়তে হবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১ উপলক্ষ্যে বইটি প্রকাশিত হবে কিংবদন্তী পাবলিকেশন থেকে।
বইটির প্রচ্ছদ করেছেনসাদেক মুকুলএবং অলংকরণ করেছেন সঞ্চিতা সৃষ্টি।
বইয়ে উল্লেখিত মূল্য ২৫০ টাকা।