২৮-তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আগের রাত।
কয়েকজন বন্ধু মিলে আমারে নিয়া গেল এক মেসে। সেখানে নাকি কোথা থেকে প্রশ্ন চলে আসবে। আগের বার নাকি ওই মেসের ব্যাপক সাফল্য ছিল। আমি বললাম, ভাল কথা, কিন্তু আমারে নিয়া লাভ কি? বলল, সলভ করতে হইব না? না করতে পারলাম না। আবার ভাবি, যদি সত্যিই সেখানে প্রশ্ন আসে! তাইলে তো না গেলে চরম মিস! তো গেলাম সেই মেসে। রাত ৮ টা থেকে বিভিন্ন জনের মোবাইলে খালি কল আসতেছে। এগুলো নাকি বিভিন্ন ভার্সিটির হল থেকে আসতাছে। প্রশ্ন আসতাছে। আমার কোন বেইল নাই সেখানে। আমারে বলল, তুই রেস্ট নে, লাগলে ডাকুম নে। আমি দেখলাম, সবাই প্রশ্ন পেয়ে যাচ্ছে আর আনন্দে বাক-বাকুম করছে। আমার কোন কাজ নেই। একটু পড়ব ভাবছিলাম, কিন্তু মন আর পড়ায় নেই। মন প্রশ্নের দিকে। ওদের ব্যস্ততা দেখে হতাশ লাগছিল। এভাবে রাত ৩ টা হয়ে গেল। ভাবলাম, এবার না ঘুমালে আর রক্ষা নেই। কিন্তু কিসের ঘুম – ১৫ মিনিট পরেই টেনে তুলল। এবার গণিত প্রশ্ন এসে গেছে। সেইটা সলভ করতে আমারে দরকার। তাকিয়ে দেখলাম ওরা ৬ জনে যে পরিমাণ প্রশ্ন মোবাইলে কালেক্ট করেছে তা গুণলে দুই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আর সেই সব প্রশ্নের যেসব সাধারণ জ্ঞান – আমি ওগুলা কিছুই পারি না। যাই হোক ম্যাথ করতে বসলাম, রাত শেষ হয়ে গেল সলভ করতে করতে। এভাবে সারা রাত নির্ঘুম থেকে গেলাম পরীক্ষা হলে। একটাই প্রার্থনা করছিলাম স্রষ্টার কাছে, তিনি যেন আমার মাথাটা ঠাণ্ডা রাখেন।
পরীক্ষা হল।
আহা – সেই দুই হাজার প্রশ্নের একটাও সেখানে ছিল না। আমি স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিলাম, অত কিছুর পরও তিনি আমার মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন পরীক্ষার হলে। আর পরীক্ষা শেষে আমার সেই বন্ধুরা দেখি একে অন্যরে গালাগালি দিতাছে – ‘এমন প্রশ্নের পিছে না ঘুইরা, একরাত পড়লেও এর চেয়ে ভাল পরীক্ষা হইত’।
তাই বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আগের রাতে কারো কথা না শুনে একটা নির্মল ঘুম দিন। পরীক্ষার সাধারণ জিনিস যেমন – এডমিড কার্ড, সিটপ্লান, কলম, পেনসিল, ঘড়ি, টাইমিং এসব আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। কতটা প্রশ্নের উত্তর করব? এটা নিয়ে আগে বলেছি। এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে আবার বলছি – ‘প্রিলিতে সেইফ মার্কস আগে থেকে বলা যায় না। নেগেটিভ মার্কিং একটা ট্রিকি বিষয়। তাই আগে শুধু নিশ্চিত জানা প্রশ্নের উত্তর করুন। যেগুলো বাদ থাকছে, প্রশ্নে দাগ দিয়ে রাখুন। শেষ হলে গুণে দেখুন কতটা হলো। এবার ভাবুন প্রশ্ন কি সহজ না কঠিন? কঠিন হলে ৫৫-৬০% মানে নিশ্চিত পাশ। আর সহজ হলে ৬৫-৭০% মানে নিশ্চিত পাশ। এই ডিসিশানটা হলে বসেই নিতে হবে। এর উপর ভিত্তি করে দেখুন ৫০-৫০ চান্স যেসব প্রশ্নের, সেগুলো উত্তর করতে পারেন।’ আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষার হলে যান। নিজের উপরই বিশ্বাস রাখুন। পাশের জন্ ৯০% ক্ষেত্রে আপনার চেয়ে খারাপ প্রিপারেশন নিয়েছে। তাই ওই সময়টা তাঁকে এভয়েড করুন। ম্যাথ, মানসিক দক্ষতা – এগুলো শেষের জন্য ফেলে রাখবেন না। সময় থাকতেই দিয়ে ফেলুন। ২ ঘন্টা কাজে লাগাতে পারলেই প্রিলি পার হয়ে যাবেন। কি ভাল পারেন, খারাপ পারেন ভুলে যান। জাস্ট দুই ঘন্টা ফাইট করতে রেডি হোন। সবার জন্য শুভকামনা। একটা পারফেক্ট T20 ম্যাচ কনফিডেন্টের সাথে খেলে আসুন, প্রিলি কেউ আটকাতে পারবে না।
©সুজন দেবনাথ