আমি তখন পিএটিসি ট্রেনিংয়ে। ক্লাস নিচ্ছেন বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব। নাম বললে আপনারা চিনে যাবেন, তাই নাম বলা যাবে না। আমি গোবেচারা মানুষ, ক্লাসের কোনায় বসি, যাতে একটু আড়ালে থাকি। কিন্তু কী ভেবে যেন ওনার চোখটা আমার উপরেই পড়ল।
- ‘কোন সার্ভিসে আছেন?’
- ‘ফরেন সার্ভিসে, স্যার।’
- ‘ও, ওখানে তো দুইটা জিনিস – ফ্রি ওয়াইন আর ফ্রি উইমেন। বাহ, বেশ আছেন। মজার উপর মজা।’
পুরো ক্লাস হৈ হৈ করে ওঠল। ফিস ফিস শব্দ – ফ্রি ওয়াইন আর ফ্রি উইমেন। আমি বাকরুদ্ধ। আমার তখন চাকরির বয়স মাত্র চার মাস। তেমন কিছু তো জানি না। কী জানি, হতেও তো পারে – সামনের দিনগুলোতে ফ্রি জিনিস আসতে থাকবে ঢাকি ভরে ভরে। উনি কি আর না জেনে বলেছেন!
তারপর পদ্মা-যমুনায় অনেক জল বয়ে গেল। চারটা বছর কেটে গেল। দেশেও কাজ করলাম, বিদেশেও ছিলাম।
হায়, আমার কাছে কোনদিন ফ্রি উইমেন এলো না। হয়তো আমার চেহারা খারাপ। ফ্রি ওয়াইনের সুযোগ অবশ্য মাঝে মাঝে এসেছে। আসলে কি হবে? আমি যে সেটার ব্যবহার জানি না। অপাত্রে মুক্তা পড়লে পাত্রের আর কি দোষ?
মাঝে মাঝে সেই লেকচারের কথা মনে পড়ে। ‘মজার উপর মজা।’ কিন্তু মজার উল্টো দিকের খবর উনি জানতেন না, যেমন জানে না বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ। থাক সেসব কথা। আমার কষ্ট আমারই থাক। কষ্ট আসলে ভাগ করার জিনিস না। ভাগ করতে হয় আনন্দ। তাই এই নিয়ন আলোতে ঢাকা শহরের মূল্যহীন চাঁদের থেকে এক ফোঁটা আনন্দ ধার করে, চলুন আনন্দ করি। মিথ্যে করে হলেও একটা সুখের গান গাই।
© সুজন দেবনাথ