Select Page

স্পার্টা নামটা শুনলেই অবচেতনভাবেই হেলেনের কথা মনে পড়ে। হেলেন অফ স্পার্টা। ট্রয়ের যুদ্ধের বিজয়ী শক্তি স্পার্টা। শুধু এই একটি কারণেই সারা পৃথিবী স্পার্টার নাম জানে। স্পার্টানদের সব বীরত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধ ছাড়া এই জাতিটির তেমন কোন বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন নেই। ওদের কাছে বীরত্ব মানেই রক্তেভেজা জিনিস।

রক্তপিপাসু বীরের দেশ স্পার্টায় সন্তান জন্ম হবার সাথে সাথে সদ্যোজাত শিশুটিকে নেড়ে চেড়ে দেখতো ভবিষ্যতে এটি যুদ্ধ করার উপযুক্ত হবে কিনা। যদি মনে হতো শিশুটি যুদ্ধের উপযুক্ত নয়, সাথে সাথে তাঁকে হত্যা করতো। এরপর শিশুর বয়স ৭ বছর হলেই তাঁকে মায়ের থেকে আলাদা করে নিয়ে যেত যুদ্ধক্ষেত্রে। একজন নির্দয় গুরুর কাছে যুদ্ধবি্দ্যা করাই ছিলো তাঁদের যৌবনের শিক্ষা, মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার দীক্ষা। যুদ্ধ বিদ্যা সমাপ্ত হলে, তাঁর বীরত্ব প্রমাণ করার জন্য একজন হেলট সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করতে হতো। যেদিন সে একজন হেলটকে হত্যা করতে পারতো, সেদিনই তাঁকে দেয়া হতো স্পার্টার নাগরিকত্ব।
.
আমি ভাবতাম, এই রকম নির্মম আর অমানবিক স্পার্টানরা শুধু একটা নারীর জন্য অতো বড় ট্রয় যুদ্ধ করেছে – ঠিক মেলে না। কিন্তু না, আসলে স্পার্টানদের কাছে নারী মানে ছিলো বিশেষ শক্তি, জীবনকে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী। স্পার্টার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পৃথিবীর প্রথম গণতন্ত্র এথেন্স যেদিন নারীকে নাগরিকত্বটুকুও দেয়নি, সেদিন কিন্তু স্পার্টানরা তাঁদের নারীকে দিয়েছিলো অনেক উঁচু আসন। খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে স্পার্টানরা আইন করে পাথরের উপর লিখে রেখেছিলো –

‘পৃথিবীতে সবচেয়ে পবিত্র জিনিস হলো সমাধি। আর এই পবিত্র সমাধিতে শুধু দুই ধরনের মানুষ নাম লিখা থাকবে – যুদ্ধকালে নিহত সৈনিকের নাম আর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নিহত মায়ের নাম’।

সেই যুগের হিসেবে একেবারে চমকে ওঠার মত আইন। আড়াই হাজার বছর আগেই তাঁরা সন্তান জন্ম দিতে নিহত মাকে শহীদের সম্মান দিয়েছিলো।

শুধু এই কথাটা মনে করেই স্পার্টানদের অমানবিক সকল নিয়মকে ক্ষমা করে দেয়া যায়। পশ্চিম ইউরোপে সভ্যতা এনেছে গ্রীস, আর সেই গ্রিসের স্পার্টা নগরী ইউরোপকে শিখিয়েছে নারীদের অনন্যভাবে শ্রদ্ধা করার রীতি। গণতন্ত্র যদি এথেন্সের আবিষ্কার হয়, নারীমুক্তিও নিঃসন্দেহে স্পার্টার আবিষ্কার।

এখন থেকে স্পার্টা নামটা শুনলে শুধু হেলেন নয়, দুটি শব্দ মনে আসবে – হেলেন আর স্পার্টার মা – Helen of Sparta & Mother of Sparta.

// স্পার্টার মা // ©সুজন দেবনাথ